মানুষের হৃদয়ের অন্ধকার দূর করার আলো, আল কোরআন। যেদিন এই কিতাব থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেদিন থেকেই তার জীবনের আলো নিভতে শুরু করে। কোরআন শুধু একটি পবিত্র গ্রন্থ নয়; এটি আল্লাহর বাণী, মানবজাতির ত্রাণকর্তা, পথহারা মানুষের দিশা। তাই কোরআন তিলাওয়াত থেকে দূরে থাকা যে কত বড় ক্ষতি, তা কোরআন-হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
এ সম্পর্কে সুরা হুদে আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে কোরআন জানে না, সে অন্ধ-বধির মানুষের মতো। আলো সামনে থাকলেও সে তা দেখতে পারে না।”
আর সুরা ত্বহা’র শব্দগুলো যেন শিরদাঁড়া ঠান্ডা করে দেয়, “যে ব্যক্তি কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে সংকীর্ণ, কষ্টে ভরা। কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ করে উঠানো হবে। বিস্ময়ে সে যখন বলবে, “আমি তো দুনিয়ায় দেখতে পেতাম!” আল্লাহ উত্তর দেবেন, “তুমি আমার আয়াত ভুলে গিয়েছিলে, আজ আমিও তোমাকে ভুলে গেলাম।”
একবার ভাবুন তো, কী ভয়ঙ্কর! কী বেদনাদায়ক সেই অবস্থা! যখন সৃষ্টিকর্তা নিজেই বলেন “আজ আমি তোমাদের ভুলে যাচ্ছি।”
সুরা জুখরুফে আরও সতর্ক করা হয়েছে, “কোরআন থেকে গাফিল মানুষকে তার অজান্তেই শয়তান বন্ধু বানিয়ে ফেলে। সে পথ হারায়, অথচ ভাবে, সে সঠিক করছে। যে ভয়াল প্রতারণা কবর পর্যন্ত সাথে থাকে।”
জাহান্নামে দাঁড়িয়ে তারা বুক চাপড়ে বলবে, “হায় আফসোস! যদি আমরা কোরআন শুনতাম, বুঝতাম, মানতাম” তখন আর ফিরে যাওয়ার পথ থাকবে না।
কোরআন,শুধু দুনিয়া নয়, আখিরাতেরও সঙ্গী। হাদিসে বলা হয়েছে, কোরআন মানুষের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আজ যে কোরআন আমরা তাকের ওপর সাজিয়ে রাখি, কেয়ামতের দিন সেটিই বলতে পারে, “হে আল্লাহ, এ বান্দা আমাকে পড়েনি, আমাকে ভুলে গিয়েছিল।”
অন্যদিকে কোরআন পাঠকারীদের জন্য রয়েছে সীমাহীন রহমত। কোরআন তিলাওয়াতের মহাপুরস্কার, হৃদয় শান্তির চাবিকাঠি।
আল্লাহ বলেন, “যারা কোরআন তিলাওয়াত করে ও নামাজ কায়েম করে—তারা এমন এক ব্যবসা করছে যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।”
প্রতিটি হরফে দশ নেকি, আলিফ, লাম, মীম—প্রতিটিই আলাদা পুরস্কার। কোরআন পাঠকারীর দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার মতো, ঘ্রাণে মন ভরে যায়, স্বাদে হৃদয় প্রশান্ত হয়।
কোরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য কিয়ামতের দিন কোরআন নিজেই সুপারিশ করবে, আর বলবে, “হে আল্লাহ, তাকে জান্নাতে নিয়ে যান।
কোরআন এমন এক আলো যে আলো যার জীবনে ঢোকে, তার জীবনের সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে যায়। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জীবন ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে যায়।
তাই আল্লাহর এই মহাগ্রন্থ থেকে দূরে থাকা মানে নিজের হৃদয়কে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া।

