
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
বাংলাদেশের আবাসন শিল্পে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের নাম আজ একটি আস্থার প্রতীক। ১৯৬৫ সালে খ্যাতিমান উদ্যোক্তা জহুরুল ইসলামের হাত ধরে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান ঢাকার নগরায়ণকে পরিকল্পিত আবাসনে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ শুরু করেছিল। প্রথম প্রকল্প হিসেবে রাজধানীর পল্লবী থানায় ৭০০ বাড়ি নির্মাণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। পাশাপাশি ৯১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে তারা বৃহৎ পরিসরে উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইস্টার্ন হাউজিং আবাসন খাতের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। বনশ্রী, দক্ষিণ বনশ্রী, মহানগর, নিকেতন, ছায়াবিথি (বাসাবো), প্যারাডোগা (যাত্রাবাড়ী), ভেমর, পল্লবী ফেস-১ ও ফেস-২, মায়াকানন (আমিনবাজার), সাভার, আফতাবনগর ও রায়েরবাজার—এসব এলাকায় তারা একের পর এক আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে আফতাবনগর প্রকল্প বর্তমানে রাজধানীর অন্যতম আধুনিক আবাসিক এলাকায় রূপ নিচ্ছে। গত চার বছর ধরে মেজর মো. আলতামাস করিম (অব.) এ প্রকল্পকে পরিকল্পিত নগরীতে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তার নেতৃত্বে আফতাবনগর অচিরেই ঢাকার সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এলাকায় পরিণত হবে।
তবে সাফল্যের এই দীর্ঘ পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি কখনোই সংকটের মুখোমুখি হয়নি, তা নয়। ২০১৬ সালে প্রায় সাড়ে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণের চাপে পড়ে ইস্টার্ন হাউজিং বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। সেই সময় অনেকেই কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সঠিক নেতৃত্বের ফলে তারা সেই সংকট কাটিয়ে ওঠে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে এবং তাদের এফডিআর এখন দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকায়। এই অর্জন প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা থাকলে যে কোনো সংকটই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
যখন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণের ভারে দিশেহারা, তখন ঋণমুক্ত থেকে ইস্টার্ন হাউজিং একটি সফল ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে নজির স্থাপন করেছে।
কোম্পানিটি রিহ্যাবের ২৯ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের অন্যতম, ফলে আবাসন খাতের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় ব্যবস্থাপনার গুরুদায়িত্ব সামলাচ্ছেন ধীরাজ মালাকার। তিনি ২০১০ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়ে কোম্পানিকে নতুনভাবে দাঁড় করান এবং লাভজনক অবস্থানে নিয়ে আসেন।
বর্তমানে ইস্টার্ন হাউজিং কেবল একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান নয়, বরং দেশের আবাসন শিল্পের দৃঢ় ভিত্তি হয়ে উঠেছে। টিকে থাকার সংগ্রাম পেরিয়ে এখন তারা শুধু লাভজনক ব্যবসায় নয়, বরং একটি টেকসই ও পরিকল্পিত নগরায়ণের রূপরেখা তৈরি করছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও আধুনিক আবাসন নিশ্চিত করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য, আর সেই লক্ষ্য অর্জনে ইস্টার্ন হাউজিংকে ভবিষ্যতেও অন্যতম ভরসার নাম হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।