
ঢাকা জেলার শিল্পঘনাঞ্চল সাভার উপজেলাকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত রোববার পরিবেশ অধিদপ্তর এক পরিপত্র জারি করে এ তথ্য জানিয়েছে। পরিপত্র অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থায়ী বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাভারের বার্ষিক বায়ু মান জাতীয় নির্ধারিত সীমার প্রায় তিন গুণ অতিক্রম করেছে। এর ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। সাভার উপজেলা ঢাকা জেলার মধ্যে মারাত্মক বায়ুদূষণযুক্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পাঁচ মাসের জন্য উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়, যা সাভারের দূষিত বায়ুকে ঢাকার দিকে নিয়ে আসে এবং ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকিও এই কারণে বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ অনুযায়ী সাভার উপজেলার পুরো এলাকা ডিগ্রেডেড এয়ারশেড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ডিগ্রেডেড এয়ারশেড ঘোষিত এলাকায় নিম্নলিখিত কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে—
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সাভারের সমস্ত ইটভাটায় (টানেল ও হাইব্রিড হফম্যান কিলন বাদে) ইট পোড়ানো ও প্রস্তুতির কাজ চালানো। উন্মুক্ত স্থানে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো। নতুন শিল্পকারখানায় পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া। এই কর্মপরিকল্পনায় উল্লিখিত অন্যান্য দূষণজনক কার্যক্রম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাভারকে এইভাবে ডিগ্রেডেড এয়ারশেড ঘোষণা করা একটি সতর্কবার্তা। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ প্রথমবার নেওয়া হয়েছে এবং এটি প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, টানেল ও হফম্যান কিলন ছাড়া সব ইটভাটা বন্ধ, কঠিন বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ এবং দূষণকারীদের ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য শিল্পাঞ্চলও এ তালিকায় আনা হতে পারে।
ডিগ্রেডেড এয়ারশেড কী:
যদি কোনো এলাকার বায়ুদূষণের মাত্রা জাতীয় মান নিয়মিতভাবে অতিক্রম করে, তবে সেই এলাকা ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর বিশেষ পরিবেশ আইন ও বিধি প্রযোজ্য হয় এবং শিল্পকারখানা ও প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়।