
ত্বকের যত্ন এখন শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্যবোধের অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। ১৩ থেকে ২৮ বছর বয়সী কিশোর-তরুণদের, অর্থাৎ জেনারেশন জেড বা জেন-জিরা, স্কিন কেয়ারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেক বেশি। তারা নিয়মিত চেষ্টা করছে নিজেদের ত্বক পরিষ্কার, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখতে। ত্বকচর্চা নিয়ে নানা রকম টিপস, ট্রেন্ড আর নতুন পণ্যে ভরপুর থাকছে তাদের দৈনন্দিন রুটিন। তবে এর সঙ্গে বাড়ছে কিছু অপ্রত্যাশিত সমস্যা।
অভিজ্ঞ ত্বক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম এবং সৌন্দর্যসেবা প্রতিষ্ঠান রেডের প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন এই বয়সীদের ত্বকচর্চায় ধীরে, বুঝে ও বয়সভিত্তিক পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
________________________________________
বয়স অনুযায়ী ত্বকের যত্ন কেন জরুরি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে নানা পরিবর্তন আসে—কৈশোরে যা স্বাভাবিক। তবে অনেকেই এই পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং নানা রকম প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে শুরু করেন। অথচ এটি করা উচিত নয়। কারণ, একজন প্রাপ্তবয়স্কের ত্বকের পণ্য কিশোরের ত্বকের জন্য মানানসই নয়। আফজালুল করিম বলেন, ত্বকের যত্ন একেবারেই বয়সনির্ভর।
এই বয়সে স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডে প্রভাবিত হয়ে পণ্য ব্যবহার না করে, বরং বয়স, ত্বকের ধরন ও সমস্যা বুঝে যত্ন নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
________________________________________
‘CMS’ রুটিনই যথেষ্ট
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলছেন, এই বয়সে যত কম পণ্য ব্যবহার করা যায়, তত ভালো। বেশি পণ্য ব্যবহারে বরং ত্বকের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে। তাই ছেলেমেয়ে সবাইকে ‘CMS’ অর্থাৎ ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন এই তিনটি জিনিস দিয়ে একটি বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
• ক্লিনজার: ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার বেছে নিতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকে ওয়াটারবেজড ক্লিনজার, শুষ্ক ত্বকে অয়েলবেজড ক্লিনজার এবং ব্রণের ক্ষেত্রে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা টি ট্রি অয়েলযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে।
• টোনার: টোনার ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে, তবে এটি ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন না হলে এড়িয়ে চলাও যায়।
• সানস্ক্রিন: বাইরে যাওয়ার সময়, এমনকি মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটা অত্যন্ত জরুরি। এটি ছেলে-মেয়ে সবার জন্য প্রযোজ্য।
________________________________________
সিরাম: কখন ব্যবহার করবেন?
সিরাম মূলত ত্বকের নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। তবে কিশোর বয়সে সিরাম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। প্রাপ্তবয়স্ক হলে এবং সমস্যা অনুযায়ী প্রয়োজনে সিরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
• ব্রণের জন্য: স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা নায়াসিনামাইড সিরাম
• কালচে দাগের জন্য: আলফা আরবুটিন, ভিটামিন সি
• শুষ্ক ত্বকের জন্য: হায়ালুরোনিক অ্যাসিড
• বয়সজনিত সমস্যায়: রেটিনল
তবে সিরাম ব্যবহারের আগে অবশ্যই বোতলে দেওয়া নির্দেশনা পড়ে ত্বক ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
________________________________________
ট্রেন্ড নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী যত্ন
অনলাইনে ছড়িয়ে থাকা স্কিন কেয়ার ট্রেন্ড—যেমন স্লাগিং (মুখে বেশি পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমানো)—সবাইকে মানায় না। ১৮ বছর বয়সী রুহিনা তারান্নুম ইনস্টাগ্রাম দেখে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ছোট ছোট ব্রণ পেয়ে বিরক্ত হন। তাই অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের ভিডিও দেখে ত্বকের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা না চালিয়ে, নিজের ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন বুঝে ত্বকের যত্ন নেওয়াটাই শ্রেয়।
________________________________________
ভুল পণ্য ব্যবহারের ঝুঁকি
অনেকে অনলাইনের সাজেশন বা বন্ধুর সুপারিশে বিভিন্ন ওষুধ বা পণ্য ব্যবহার করে থাকেন। ত্বকের কোনো সমস্যা হলে আগে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত। না হলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
________________________________________
রঙ নয়, স্বাস্থ্যই মুখ্য
ফর্সা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে বাজারে প্রচলিত রঙ ফর্সাকারী স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করছেন অনেকেই। যা সাময়িকভাবে ত্বক ফর্সা করলেও দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতি করে। সলিমুল্লাহ মেডিকেলের শিক্ষার্থী মেহেজাবীন হোসেন যেমন এই বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা ছড়াচ্ছেন। ত্বক ফর্সা নয়, বরং সুস্থ রাখাটাই হওয়া উচিত লক্ষ্য।
________________________________________
‘মি টাইম’ ও স্কিন কেয়ার
অনেক তরুণ-তরুণী দিনে একটি নির্দিষ্ট সময় ত্বকের যত্নে ব্যয় করেন, যাকে তাঁরা বলেন ‘মি টাইম’। রাতে ঘুমানোর আগে এই সময়টিতে নিজের যত্নে কিছুটা সময় দেওয়াই হতে পারে আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি।
________________________________________
ছেলেদের জন্য পরামর্শ
ত্বকের যত্ন শুধু মেয়েদের জন্য নয়, ছেলেদের জন্যও প্রয়োজন। সাধারণ রুটিন—ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন—এই তিনটি ব্যবহার করলেই চলবে। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
________________________________________
খরচ বাঁচিয়ে স্কিন কেয়ার
ত্বকের যত্ন মানেই অনেক পণ্য কিনে ফেলা নয়। বরং মাল্টি-ইউজ প্রোডাক্ট ব্যবহার করে খরচ বাঁচানো সম্ভব। যেমন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সানস্ক্রিন, সিরামযুক্ত ক্রিম, কিংবা স্ক্রাবসহ ফেসওয়াশ। এতে করে পণ্যের সংখ্যা যেমন কমবে, তেমনি সময় ও টাকা—দুটোই বাঁচবে।