
চলছে কাঁঠালের মৌসুম। বাজারে এখন সহজলভ্য এই ফলের রসে যেমন স্বাদে ভরপুর, তেমনি এর বিচিতেও লুকিয়ে রয়েছে দারুণ সব পুষ্টিগুণ। গবেষণা বলছে, কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন, আঁশ, খনিজ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এই বিচি রাখলে হজমশক্তি যেমন বাড়ে, তেমনি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও দৃষ্টিশক্তিও উন্নত হয়।
প্রতি ২৮ গ্রাম বা এক আউন্স কাঁঠালের বিচিতে থাকে মাত্র ৫৩ ক্যালরি, ২ গ্রাম প্রোটিন, ১১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, প্রায় শূন্য চর্বি এবং ০.৫ গ্রাম আঁশ। এতে রিবোফ্লাভিন (বি২) ও থায়ামিন (বি১) যথাক্রমে দৈনিক চাহিদার ৮ ও ৭ শতাংশ পূরণ করে। এছাড়াও ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান এতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
বিচির নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা
হজমশক্তি বাড়ায়
কাঁঠালের বিচিতে থাকা রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ ও আঁশ অন্ত্রে গিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে। ফলে হজমশক্তি বাড়ে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং বিপাকক্রিয়াও উন্নত হয়।
সংক্রমণ ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে কার্যকর
চীনের প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতিতে কাঁঠালের বিচি ডায়রিয়া ও হজম সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার হতো। আধুনিক গবেষণায়ও মিলেছে ব্যাকটেরিয়াবিরোধী প্রমাণ।
ক্যানসার প্রতিরোধেও সম্ভাবনা
এতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট—ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনলিক ও স্যাপোনিন—শরীরের কোষক্ষয় রোধ করে, এমনকি প্রাথমিক গবেষণায় ক্যানসারের ঝুঁকি ৬১% পর্যন্ত কমাতে পারে বলে জানা গেছে।
রক্তস্বল্পতা রোধ করে
এই বিচিতে আছে প্রচুর আয়রন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় ও অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমায়। ফলে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
চোখ ও চুলের যত্নে
ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ কাঁঠালের বিচি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, নাইট ব্লাইন্ডনেস রোধে সহায়ক। একই সঙ্গে এটি চুলের আগা ফাটা ও রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে।
পেশী গঠনে সহায়ক
চর্বিমুক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ বিচি শরীরচর্চাকারীদের জন্যও উপযোগী। এটি পেশি গঠন ও শক্তি বাড়াতে সহায়ক।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে
বিচিতে থাকা প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্য বজায় রাখে, মানসিক চাপ কমায়।
ত্বকের জন্যও কার্যকর
কাঁঠালের বিচির গুঁড়া দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে বলিরেখা কমে, ত্বক হয় উজ্জ্বল ও মসৃণ। এটি প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক হিসেবেও কাজ করে।
প্রচলিত চিকিৎসায় বিচির ব্যবহার
শুধু আধুনিক চিকিৎসা নয়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাঁঠালের বিচি যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা আয়রন ও খনিজ উপাদান দীর্ঘদিন ধরে লোকজ চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁঠালের বিচি শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। খোসা ছাড়িয়ে সিদ্ধ বা ভেজে খাওয়া যায়। এছাড়া গুঁড়া করে ব্যবহার করা যায় নানা খাদ্যে। অনেকে বিচির পাউডার তৈরি করে ডায়রিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসায়ও ব্যবহার করেন।
পুষ্টিবিদদের মতে, অল্প খরচে দৈনিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কাঁঠালের বিচি হতে পারে একটি আদর্শ দেশি খাবার।
শেষ কথা:
কাঁঠাল এমন একটি ফল যার প্রতিটি অংশের ব্যবহার সম্ভব। তার বিচিটি পুষ্টিগুণে যেমন অনন্য, তেমনি স্বাস্থ্যরক্ষায়ও অসাধারণ। চলতি মৌসুমে তাই কাঁঠাল খেয়ে বিচিগুলো আর ফেলবেন না, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তুলে রাখুন পাতে।