প্রসেস ফুড : স্বাদে লুকানো রোগের বীজ
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

সকালের বিস্কুট থেকে শুরু করে সন্ধ্যার চানাচুর, প্রক্রিয়াজাত খাবার এখন বাংলাদেশিদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ।

কিন্তু সাম্প্রতিক এক পরীক্ষাগারে করা গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাবারের অনেকগুলিতে অতিরিক্ত লবণ, চিনি এবং ক্ষতিকর চর্বি রয়েছে — যার পরিমাণ প্রায়শই প্যাকেটের লেবেলে সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয় না।

প্রক্রিয়াজাত খাবার হলো সেইসব খাবার যা তাদের আসল রূপ পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন যান্ত্রিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াগুলিতে প্রায়শই স্বাদ, গঠন এবং সংরক্ষণের সময়কাল বাড়ানোর জন্য প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম স্বাদ, রঙ, মিষ্টি এবং অন্যান্য সংযোজন যুক্ত করা হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবারের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে প্যাকেটজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয়, হিমায়িত খাবার, টিনজাত স্যুপ এবং ফাস্ট ফুড আইটেম।

এই প্রসেসড ফুড খাওয়া উচিত নয় জেনেও এই খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ি। পছন্দসই খাবার আমাদের মানসিক তৃপ্তি দেয় ঠিকই, কিন্তু অনেক সময় শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে। যতই খেতে ইচ্ছে করুক, কোনও কোনও খাবার এই সময় এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এইসব প্যাকেট জাত প্রসেসড ফুড খেলে হার্টের একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। এমনকী অল্প বয়সেই ডেকে আনছে মৃত্যু।

সাধারণত রেডিমেড ফ্রোজেন খাবার, চিপস, প্যাকেটজাত পাউরুটি এবং মাইক্রোওয়েভে গরম করা খাবার যেমন পিজ্জা, বার্গার—এই ধরনের খাবার খুবই হাই প্রসেসড ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ। ব্যস্ত সময়ের জন্য সুবিধাজনক হলেও এগুলো দৈনন্দিন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

অনেকেই পছন্দ করেন প্রসেসড মিট বা সসেজ। পিজ্জা, হটডগ, নুডলসের মতো মুখরোচক খাবারে সসেজ ব্যবহার করা হয়। স্বাদে দারুণ হলেও, এর উপকারিতা প্রায় নেই। বরং এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত স্যুপ ও অন্যান্য রেডিমেড খাবারে থাকে বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ এবং কৃত্রিম ফ্লেভার, তাই এগুলোও হাই প্রসেসড খাবারের তালিকায় রয়েছে।

হাই প্রসেসড খাবার শুধু পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে না, বরং এটি ক্ষুধার হরমোন উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে, যার ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, এই ধরনের খাবারে থাকে ট্রান্সফ্যাট, যা হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। ট্রান্সফ্যাটকে ফ্যাটি অ্যাসিডের সবচেয়ে ক্ষতিকর রূপ হিসেবে ধরা হয়।

Processed ফুড খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি ও রোগ: 

১. হৃদরোগ (Heart Disease) - ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে হৃদপিণ্ডের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

২. উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)- লবণের অতিরিক্ত ব্যবহার রক্তচাপ বাড়ায়।

৩. ডায়াবেটিস (Diabetes)- চিনি ও ক্যালোরির অতিরিক্ত গ্রহণ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. স্থূলতা (Obesity)- চর্বি এবং চিনি বেশি খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

৫. কোলেস্টেরলজনিত সমস্যা (High Cholesterol / Hyperlipidemia)- ক্ষতিকর চর্বি ও প্রক্রিয়াজাত উপাদানের কারণে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে।

প্রসেসড ফুড থেকে বিরত থাকার উপায়:

তাজা খাবার বেছে নিন । যতটা সম্ভব ফল, সবজি, ডাল, মাছ, দুধ ও ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। ঘরে রান্না করা খাবার স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর। লেবেল ও উপাদান পড়ে নিন । খাবারের প্যাকেটে লেখা উপাদান তালিকা ও পুষ্টি তথ্য লক্ষ্য করুন। বেশি চিনি, লবণ বা ট্রান্সফ্যাট থাকলে এড়িয়ে চলুন।

চিপসের পরিবর্তে ভাজা বাদাম এবং ইনস্ট্যান্ট নুডলসের বদলে হোমমেড স্যুপ বা সবজি পাস্তা। ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করুন । একসাথে সব প্রসেসড ফুড বাদ দেওয়ার চেষ্টা না করে ধাপে ধাপে কমানো। সফট ড্রিঙ্ক ও এনার্জি ড্রিঙ্কের পরিবর্তে ফলমূলের জুস, লেবুর পানি বা পানি বেশি পান করুন। 


এস কে আর