
হেড নেক ক্যান্সার একটি অত্যন্ত ভয়ানক রোগ হলেও, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব—এই বার্তা সম্প্রতি অনলাইন আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন।
আমাদের দেশে আনুমানিক ২০ লাখ ক্যান্সারের রোগী আছেন, প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ নতুন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এক লাখ থেকে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ২৭৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে ক্যান্সারে—যার মধ্যে হেড নেক ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্য ক্যান্সারগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এজন্য এই বিষয়টি জাতীয় স্বাস্থ্যসচেতনতার গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হচ্ছে।
গত ৩০ জুলাই, ‘বিশ্ব হেড নেক ক্যান্সার দিবস’ উপলক্ষে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এক আয়োজনের মাধ্যমে অনলাইনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একটি লাইভ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত করে। মিডিয়া পার্টনার ছিল প্রথম আলো ডটকম, প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড পার্টনার ছিলেন লুমনা, বিলটিন, কেফুক্ল্যাভ এবং ওলনেজ। বাংলাদেশ হেড নেক সার্জনস সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আব্দুস সাত্তার সঞ্চালনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী, অধ্যাপক মাজহারুল শাহীন, অধ্যাপক হাসান জাফর, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবীর, অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ ফারহান আলী রাজীব।
বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী জানান, “হেড নেক ক্যান্সার বলতে মুখগহ্বর, গলা, সাইনাস, ক্যান্টি, নাক, কানের ক্যান্সার ইত্যাদি একক গ্রুপে রাখা হয়, কারণ এদের উপসর্গগুলি মিল,”—এগুলি পূর্বে আলাদা হলেও আজ একটি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে বিবেচিত হচ্ছে। সম্মানিত অধ্যাপক হাসান জাফর বিদ্যালয় করেছেন, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, দীর্ঘস্থায়ী গলাব্যথা, কণ্ঠস্বর বদলায়, মুখে দুর্গন্ধ, চোখঝলক ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
সিএফ বলা যায়, “যারা পান, সুপারি, তামাক ও ধূমপানের আসক্ত তাদের হেড নেক ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি,”—এ বিষয়টিও সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ ফারহান আলী রাজীব উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া রেডিয়েশন ও ভাইরাস সংক্রমণ ওই ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যদি রোগগুচ্ছ লেট স্টেজে গিয়ে সম্মুখীন হয়, তাহলে নিরাময়ের পথ কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়; কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে চিকিৎসা করলে অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব, অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির মাধ্যমে রোগী পুনরায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
যথার্থ নির্ণয় ও চিকিৎসা কোথায় পাওয়া যায়—এই বিষয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মাজহারুল শাহীন জানান, বাংলাদেশের জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সচেতন প্রীব্রাত্র সাধারণ পর্যায়ে প্রাথমিক সেবা পাওয়া সম্ভব। তবে রেডিওথেরাপি ক্ষেত্রটি বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নত মানে পরিচালিত হচ্ছে।
মুখে কোন ক্ষত তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে, গলার স্বর বদল দুই থেকে তিন সপ্তাহেও না ঠিক হলে বা গলা ও কানে অস্বাভাবিক ফোলা থাকলে দ্রুত ডাক্তার দেখানোর আহ্বান করা হয়েছে। “সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে”, এমনকি হেড নেক ক্যানসার থেকে পরিপূর্ণ নিরাময় সম্ভাবনা থাকে—এই বার্তা সর্বশেষ আলোচনায় বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে।