
ঢাকা থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর কোলে লুকিয়ে আছে এক ইতিহাসের খণ্ডিত নগর, 'সোনারগাঁও'। এক সময়কার বাংলার মুসলিম শাসকদের রাজধানী, নদী বন্দর এবং মসলিন বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র।
প্রাচীন গ্রীক ও রোমান বণিকরা এই নগরকে ‘এম্পোরিয়াম’ বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। দিল্লি সালতানাতের সময় ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ ও তার পুত্র ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহ এটিকে রাজধানী বানান। রাজদরবারের মঞ্চে বাজত আজ্ঞার কণ্ঠ, আর রাজ্য টাকশালে প্রতিধ্বনিত হতো বাংলার সমৃদ্ধি।
বারো ভূঁইয়া ও মুঘল হামলার সত্ত্বেও সোনারগাঁও প্রতিরোধ করে বাংলার অহংকার রক্ষা করেছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে পানাম পাড়ার রাজবাড়ি ও টাউনহাউসের আবির্ভাবের সঙ্গে শহরের জৌলুস কিছুটা ম্লান হলেও, এর ইতিহাস আজও জীবন্ত।
এখানে রয়েছে সোনাবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের সমাধি এবং ইব্রাহীম দানিশমান্দ-এর দরগা। শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, এবং পানাম নগর, সবই সোনারগাঁওয়ের অতীতের গৌরবকে বয়ে নিয়ে আসে আজও।
প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি নদীর ঢেউয়ে বাজে বাংলার ইতিহাসের কণ্ঠস্বর। সোনারগাঁও শুধু একটি স্থান নয়, এটি বাংলার হারানো রাজধানী, ইতিহাসের দ্যুতি এবং কারুশিল্পের চিরন্তন গৌরব। এখানে দাঁড়ালে আপনি অনুভব করবেন অতীতের সোনালী মর্যাদার ছোঁয়া।