ঘুরে আসুন নুহাশ পল্লী
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের ঠিকানা নুহাশ পল্লী। গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত এই বাগানবাড়িটি ১৯৯৭ সালে গড়ে তোলেন তিনি। নাটক ও সিনেমার শুটিং স্পট হিসেবে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়। এখানেই হুমায়ূন আহমেদের সমাধিস্থল।



গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশপল্লী।  ১৯৯৭ সালে হুমায়ূন আহমেদ নিজেই গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের এই নুহাশ পল্লী। অভিনেতা ডাঃ ইজাজ গাজীপুরের এই জমিটি কিনতে সহায়তা করেছেন । হুমায়ুন আহমেদ এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের একমাত্র পুত্র নুহাশের নামে নুহাশপল্লীর নামকরণ করা হয়েছে।হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সকল নাটক সিনেমার অন্যতম শুটিং স্পট এই নুহাশ পল্লী।



নুহাশ পল্লীর প্রতিটি স্থাপনায় মিশে আছে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি ও ভালোবাসা। বিভিন্ন নাটক, সিনেমার শুটি নুহাশ পল্লীতেই করতেন হুমায়ূন আহমেদ । তার জীবনের অনেকটা সময় কাটিইয়েছেন  নুহাশ পল্লীতে ।



যা দেখতে পাবেন নুহাশ পল্লীতেঃ

এখানে ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নামে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে।  নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশ জুড়ে নানা রকমের গাছ। রয়েছে সানকাধানো ঘাট। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নারিকেল গাছ।  এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল, দাবার গুটির, টি-হাউসসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য। হুমায়ূন আহমেদ শৈল্পিক চিন্তা দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই নুহাশ পল্লী। ভূত বিলাস, বৃষ্টিবিলাসসহ তিনটি বাংলো রয়েছে এই বাগানবাড়িটিতে।



যেভাবে যাবেন নুহাশ পল্লীঃ

নুহাশ পল্লীতে যেতে প্রথমেই যেতে হবে গাজীপুরের হোতাপাড়া বাস স্ট্যান্ডে। ঢাকা থেকে প্রভাতি, বনশ্রী ইত্যাদি বেশ কিছু বাস সার্ভিস চলাচল করে। ঢাকা থেকে হোতাপাড়া যেতে বাসে চড়ার স্থানভেদে ভাড়া লাগবে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। হোতাপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে টেম্পো, রিকশা অথবা সিএনজিতে করে নুহাশ পল্লী যাওয়া যায়। টেম্পোর ভাড়া লাগবে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকা। রিকশা ভাড়া লাগবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং সিএনজি ভাড়া করলে লাগবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। চাইলে নিজের ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়েও ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী।



টিকেট মূল্য এবং সময়সূচীঃ

নুহাশ পল্লী সারা বছর দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকে। কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিশেষ অনুরোধে মাগরিবের আজান পর্যন্ত সাধারন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়। নুহাশ পল্লীতে ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা ধরা হয়েছে।তবে বছরের ২ দিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর ( হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন) এবং ১৯ জুলাই মৃত্যু দিন নুহাশ পল্লী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এই দুই দিন ঢুকতে কোন টিকেট লাগে না।



পিকনিকের জন্য খরচঃ

এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এটি সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। কিন্তু নভেম্বর থেকে মার্চ মূলত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য ১টি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০ জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা, অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা,অন্যদিনগুলোতে ভাড়ার জন্য গুনতে হবে ৪০ হাজার টাকা।



থাকার ব্যবস্থাঃ

নুহাশ পল্লীতে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি বিলাস নামের বাংলোতে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে সকলের। তবে ভুত বিলাস নামের বাংলোতে সময় কাটানোর জন্য ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা প্রয়োজন ।