সময়টা ১৯৭৫ সালের নভেম্বর। দেশ স্বাধীন, কিন্তু রাজনীতি বন্দি অনিশ্চয়তার দেয়ালে। রাস্তায় তখন গুলির শব্দ, ক্ষমতার খেলায় কি সৈনিক কি রাজনীতিক, সবাই বিভক্ত। মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন, কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ?
৭ নভেম্বরের সকালেই বদলে যায় ইতিহাসের গতিপথ। এক সকালেই ঘুরে দাঁড়ায় রাজনীতি, পাল্টে যায় নেতৃত্ব, জন্ম নেয় নতুন এক অধ্যায় যার নাম জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস।
স্বাধীনতার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল হতাশা, বিভাজন আর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। রক্ষীবাহিনীর দমননীতি, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নামে জাসদের সশস্ত্র তৎপরতা, আর ’৭৪-এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সব মিলিয়ে দেশ তখন দিকহারা।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ভেঙে পড়ে ক্ষমতার ভারসাম্য । ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থান ঘটান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ, গৃহবন্দী করা হয় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে। কিন্তু সেনাবাহিনীর ভেতরে অনুগত্য ছিল বিভক্ত, দেশের রাজনীতি তখনও খুঁজছিল নেতৃত্বের আলোকরেখা।
সেই অনিশ্চিত মুহূর্তেই কর্নেল তাহের নামেন ময়দানে। ‘সিপাহি বিপ্লব’ এই নামেই শুরু হয় পাল্টা অভ্যুত্থান। তাঁর লক্ষ্য বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা; কিন্তু ইতিহাসের বাস্তবতা ছিল অন্য রকম।
৭ নভেম্বর সকালে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। সিপাহি ও জনতার উল্লাসে সেদিন ঢাকার আকাশ কেঁপে উঠেছিল। এক নতুন নেতৃত্বের উত্থান, এক নতুন দিকনির্দেশনার সূচনা ঘটে সেদিন।
বিপ্লবের এই উত্তাল ঢেউয়ে হারিয়ে যান খালেদ মোশাররফ। ইতিহাসবিদদের মতে, কর্নেল তাহেরের অনুগত সৈনিকদের হাতে তিনি নিহত হন। কিন্তু সময়ের স্রোত ঘুরে আসে দ্রুত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন জিয়াউর রহমান এবং শুরু হয় বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন যুগ।
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় উদার গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, আত্মনির্ভরতা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের যাত্রা। তিনি নিয়ে আসেন প্রশাসনিক সংস্কার, কৃষি ও শিল্পে কর্মসূচি এবং গ্রামীণ বাংলাদেশকে জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ।
আজও ইতিহাসের পাতায় ৭ নভেম্বর রয়ে গেছে এক বিতর্কিত, তবু তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে। কেউ বলেন এটি ছিল “সিপাহি-জনতার বিপ্লব”, আবার অনেকে বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সূচনা”।
৭ নভেম্বর, শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক নতুন দিকনির্দেশনার প্রতীক। যে দিন থেকে শুরু হয়েছিল নতুন যাত্রা, নেতৃত্বের, সংহতির, আর পুনর্জাগরণের।
“জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ইতিহাসের পাতা থেকে রাজনীতির নতুন সূচনা”

