কোরবানির হাটে গরু-মহিষ কমছে, বাড়ছে দাম
ছবিঃ সংগৃহীত

বছর বছর কোরবানির গরুর দাম বেড়েছে, আর কমেছে কোরবানি দেওয়ার সংখ্যা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০২০ সালে গড়ে বছরে ৫৪ লাখের কিছু বেশি গরু ও মহিষ কোরবানি হলেও, ২০২২-২০২৪ সালে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৪৭ লাখ ৩৩ হাজারে—যা প্রায় ১৪ শতাংশ কম।

মূলত গরুই বেশি কোরবানি হয়; মহিষের সংখ্যা থাকে মাত্র ৫০ হাজারের মতো। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দামের চাপেই অনেকেই গরু কোরবানি দিতে পারছেন না। কেউ কেউ ভাগে কোরবানি দিচ্ছেন, কেউ বা গরুর বদলে ছাগল বেছে নিচ্ছেন।

সার্বিকভাবে পশু কোরবানির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ২০১৮-২০২০ সালে গড়ে ১ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার পশু কোরবানি হলেও, ২০২২-২০২৪ সালে তা নেমে এসেছে গড়ে ১ কোটি ১ লাখ ৩৫ হাজারে। অথচ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ফলে কোরবানি বাড়ার কথা ছিল।

অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি ও আয়বৈষম্যের কারণে অনেক মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ কোরবানির সামর্থ্য হারিয়েছেন। গরু-ছাগলের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি অন্যান্য ব্যয়ও বেড়েছে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, পশুর সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি, তাই পশু আমদানির দরকার নেই। এ বছরও প্রায় ২১ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। কিন্তু বাজারে সরবরাহ বেশি হলে দাম কমার কথা—তা হয়নি।

২০১৮ সালে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল ৪৩০ টাকা কেজি, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২৪ টাকায়। বর্তমানে কেজিপ্রতি গরুর মাংস ৭৫০–৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকৃতির কোরবানিযোগ্য গরুর দাম পড়ছে ৮০ হাজার টাকার মতো, ফলে মাংসের দাম হাজার টাকার কাছাকাছি।

এত সরবরাহ থাকার পরও দাম কেন বাড়ছে—এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতিবিদরা বলেন, সরকারি পরিসংখ্যানের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যারা উৎপাদনের দায়িত্বে, তারাই হিসাব দেয়ায় স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়।

ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই মাংসের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। সরকার বলছে, বাংলাদেশ এখন মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কিন্তু দাম বাড়ছেই। খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের দাম, কমে যাওয়া চারণভূমি, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমছে না।

ব্রাহমা জাতের মাংসবহুল গরু সম্প্রসারণ না হওয়াও একটা কারণ। সরকার প্রকল্প চালালেও অনুমোদন দেয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কমছে না, দামও নিচে নামছে না। এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে কোরবানি দেওয়া বা বাজার থেকে মাংস কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।