
২০২৪ সালের কোরবানির ঈদে একটি ছাগলকে ঘিরে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তার রেশ আজও কাটেনি। ১৫ লাখ টাকা দামের সেই আলোচিত ছাগলটি এখনো জীবিত আছে, তবে আর বিক্রি হচ্ছে না। ঘটনার জেরে ছাগলের ক্রেতা, বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি আইনের জালে আটকা পড়লেও ছাগলটি আছে খামারের নির্জনে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে। খামারটির মালিক ইমরান হোসেন দাবি করেছিলেন, এনবিআরের তৎকালীন সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান তাঁদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনেছেন। ঈদের আগে মুশফিকুর একটি সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করলে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
ছবিটি প্রকাশের পর বিষয়টি গণমাধ্যম ও দুদকের নজরে আসে। প্রশ্ন ওঠে—একজন সরকারি কর্মকর্তার সন্তান কীভাবে এত দামি পশু কিনলেন? প্রথমে মতিউর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেন, পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, মুশফিকুর তাঁর দ্বিতীয় ঘরের সন্তান।
এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হলে মতিউর এনবিআর থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ হয়নি। এরপর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর রহমানের গোপন সম্পদের হিসাব ও একাধিক অনিয়মের অভিযোগ।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান চালিয়ে আমদানি–নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের পাঁচটি গরু উদ্ধার করে। পরে খামার মালিক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দুদক মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে। বর্তমানে মতিউর ও তার স্ত্রী কারাগারে রয়েছেন। তাদের সন্তানরা পলাতক। মুশফিকুর বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। আইনজীবীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার সময় তার বয়স ১৮ বছরের কম ছিল।
এদিকে, আলোচিত সেই ছাগলটি মুশফিকুর কিনলেও শেষ পর্যন্ত তিনি খামার থেকে নেন নি। সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুরের খামার ভেঙে দেওয়ার পর ছাগলটি সাভারের আরেক খামারে স্থানান্তর করা হয়।
সাদিক অ্যাগ্রোর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ছাগলটি এখনো আমাদের খামারেই আছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটি আর বিক্রি করব না। বরং দরিদ্রদের মধ্যে দান করে দেওয়ার চিন্তা করছি।”
একটি ছাগলকে ঘিরে শুরু হওয়া এই ‘ছাগল–কাণ্ড’ আজ দেশের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের একটি প্রতীকী অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাগলটি বেঁচে থাকলেও, তার ঘিরে থাকা লোকজন এখন বিচারের মুখোমুখি।