
দীর্ঘ সময় পর দেশে আবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। যেনো এই ভাইরাসের ধরণ কোনোভাবেই থামছে না। বারবার রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কোভিড-১৯। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আগের মতো ভয়াবহ না হলেও, উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
চলতি জুন মাসের প্রথম ১১ দিনেই দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন একজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে করোনার যে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—এফএলআইআরটি, এক্সএফসি এবং এনবি ১.৮.১। এই ধরনগুলো মূলত জে-এন-১ নামের পূর্ববর্তী ভ্যারিয়েন্টেরই রূপান্তর। এসব ধরন সহজে একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হলেও, এর উপসর্গ তুলনামূলকভাবে হালকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই সংক্রমিত হলেও উপসর্গ না থাকায় তারা বুঝতে পারছেন না, ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপনের মাধ্যমে অন্যদেরও সংক্রমিত করছেন। এতে করে ভাইরাসটি নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং বড় ধরনের বিপদের ঝুঁকি তৈরি করছে।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ১১ দফা সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে—
- জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরিধান করা
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা
- বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
- জ্বর, সর্দি, কাশি বা গলা ব্যথা হলে করোনা পরীক্ষা করানো
- উপসর্গ দেখা দিলে নিজেকে আলাদা রাখা
- বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা
- অপ্রয়োজনে হাসপাতাল ভিজিট না করা
- করোনা পরীক্ষার হার বাড়ানো
- চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করা
- সরকারি হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা
- গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
এরইমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রস্তুতি জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইইডিসিআর জানিয়েছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং এখনো তা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে সবাইকে সচেতন না হলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। সেই ধরন বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারে—এমন আশঙ্কায় সীমান্ত নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, কোনো উপসর্গ দেখা দিলে ১৬২৬৩ নম্বরে কল করে পরামর্শ নেওয়া যাবে। একই সঙ্গে করোনা সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যের জন্য ৩৩৩ নম্বরেও যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে উদাসীনতারও সুযোগ নেই। কারণ করোনাভাইরাস তার রূপ বদল করে বারবার ফিরে আসছে। তাই সচেতন থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা।