
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া স্বল্প খরচে, ন্যায্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে একমত হয়েছে। মঙ্গলবার পুত্রাজায়ায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ অঙ্গীকার করা হয়।
তিন দিনের সরকারি সফরের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে একাধিক সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে শ্রম অভিবাসন ছিল মূল বিষয়। দুই দেশের নেতারা কর্মীদের কল্যাণ, নিয়োগ ব্যয় কমানো এবং ন্যায্য নিয়োগ ব্যবস্থাকে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য। বর্তমানে দেশটিতে এক মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। ন্যূনতম মজুরি ১,৭০০ রিঙ্গিত, যা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের তুলনায় দ্বিগুণ। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শ্রমিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন এবং নিয়মিত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন।
যদিও কিছু সময় আগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সীমিত সংখ্যক এজেন্সি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে এজেন্সির সংখ্যা বেড়ে যায় এবং খরচও বৃদ্ধি পায়। এতে সমালোচনা শুরু হয় এবং দেশের ভেতরে কিছু মহল নেতিবাচক প্রচারণা চালায়, যা মালয়েশিয়ার পক্ষকে কিছুটা নিরুৎসাহিত করে। তবে বৈঠকে দুই দেশই এসব বিভ্রান্তি কাটিয়ে নতুন করে স্বল্প খরচে লাভজনক চাকরি ও কর্মীদের অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার। এখানকার শ্রমিকরা শুধু নিজেদের পরিবারই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখছেন—প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। আলোচনায় জানানো হয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া—পুরনো শ্রমিকরা ফিরে আসেন, নতুনরা যোগ দেন, ফলে কর্মসংস্থানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
শ্রম অভিবাসনের পাশাপাশি বৈঠকে বাণিজ্য, শিক্ষা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় ভিসা অনুমোদন পাওয়া আট হাজার শ্রমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেতে পারেননি।
দুই দেশের শীর্ষ নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন এই উদ্যোগ শ্রমিকদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।