
আপনি কি জানেন, পৃথিবীর কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় মানুষ সহজেই শতবর্ষী হয়ে ওঠেন? গবেষকেরা বলছেন, এসব এলাকা হলো “ব্লু জোন” যেখানে মানুষেরা দীর্ঘায়ুর হন কোনো রকম শারীরিক জটিলতা ছাড়াই। মার্কিন লেখক ড্যান বুয়েটনার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সহায়তায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ গবেষণা চালিয়েছেন। আজ আপনাদের পৃথিবীর এমন কিছু জায়গা সম্পর্কে জানাবো যেখানে মানুষের গড় আয়ু স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি।
প্রথমেই আসি গ্রিসের ইকারিয়া দ্বীপে। এখানে গড়ে মানুষ শতবর্ষী হন। মধ্যবয়সীদের মৃত্যুহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। এখানকার মানুষদের বিশেষত্ব—ঐতিহ্যবাহী মেডিটারিয়ান ডায়েট। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, বাদাম আর অলিভ অয়েল—এই খাবারগুলো তাঁদের হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখে।
এবার যাই জাপানের ওকিনাওয়ায়। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বসবাস। ওকিনাওয়ার মানুষরা প্রতিদিনের খাবারে রাখেন মিষ্টি আলু, সয়া, করলা আর হলুদ। স্বাস্থ্যকর এই খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেই রয়েছে তাঁদের শান্ত জীবনযাপন।
ইতালির সার্দিনিয়ার অলিয়াস্ত্রা অঞ্চলেও শতবর্ষী পুরুষদের দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি। মাংস কম খাওয়ার অভ্যাস আর সবজিভিত্তিক খাদ্য তাঁদের ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা। এখানকার মানুষ দেশটির অন্যদের তুলনায় গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন। মূল রহস্য—ধর্মীয় বিশ্বাস, নিয়মিত ব্যায়াম আর স্বাস্থ্যকর খাবার। স্থানীয় অ্যাডভেন্টিস্ট সম্প্রদায় বেশি করে ফল, বাদাম, শস্য ও শাকসবজি খেয়ে থাকেন।
সবশেষে কোস্টারিকার নিকোয়া উপদ্বীপ। এখানে মধ্যবয়সী মানুষের মৃত্যুহার বিশ্বে সবচেয়ে কম। স্থানীয়রা নিজেদের ফসল নিজেরা ফলান, উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ পানি পান করেন আর প্রতিদিন হাঁটা, সাঁতার বা সাইক্লিংয়ের মতো হালকা ব্যায়াম করেন।
এক কথায়, দীর্ঘায়ুর রহস্য লুকিয়ে আছে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম আর দৃঢ় সামাজিক বন্ধনে।
এই পাঁচ অঞ্চলের জীবনধারা হয়তোই আমাদের বলে দেয়—দীর্ঘ জীবন বিলাসবহুল নয়, বরং সাধারণ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ফল।