কেন হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকি পোকা?
ছবিঃ সংগৃহীত

একটা সময় ছিল, যখন গ্রীষ্মের রাত মানেই ছিল জোনাকিদের উৎসব। নিস্তব্ধ মাঠে, পুকুরপাড়ে কিংবা ঝোপঝাড়ের আড়ালে হঠাৎই জ্বলে উঠতো টুকটুক আলো। সেই ক্ষুদ্র আলোকবিন্দুতে জমে থাকতো শৈশবের হাসি, খেলার আনন্দ আর বিস্ময়ের গল্প। কিন্তু আজ? জোনাকি কন্যারা বিলুপ্ত প্রায়! আজকের শিশুদের কাছে জোনাকির আলো যেন কেবল গল্পের এক চরিত্র যা ছুঁয়ে দেখা তো দূরের কথা,তার দেখা মেলাও ভার!


তবে, শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্য যে, আমরা নিজের হাতেই নিভিয়ে দিচ্ছি প্রকৃতির এই অপূর্ব প্রদীপ।

বিদ্যুতের ঝলমলে আলোয় ভরে উঠেছে গ্রাম-শহরের প্রতিটি কোণ। রাত আর নিস্তব্ধ নয়, কৃত্রিম আলোয় হারিয়ে গেছে প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য আধার। অথচ এই অন্ধকারই হল জোনাকিদের জীবনরেখা। তারা অন্ধকারে নিজেদের আলো জ্বালিয়ে খুঁজে নিত একে অপরকে , দিত প্রজননের সংকেত । এখন সেই সংকেত হারিয়ে যাচ্ছে কৃত্তিম আলোর ভিড়ে ।

এছাড়া মানুষের চাহিদা পুরনের জন্য  বলি হতে হচ্ছে এই ছোট প্রাকৃতিক প্রদীপদের। বৃহৎ জন গোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পুরনের উদ্দেশ্যে ফসল টিকিয়ে রাখার জন্য কৃষি ক্ষেতে লাগছে অতিরিক্ত কীটনাশক আর রাসায়নিক সার। যা শুধু ক্ষতিকর পোকাই মারছে না, মেরে ফেলছে জোনাকির খাদ্য আর লার্ভাকেও। শহরে প্রতিদিন ছিটানো হচ্ছে মশকনাশক, যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে তাদের বাসস্থান। আর জোনাকি তো খুঁতখুঁতে প্রাণী— চায় অন্ধকার, আর্দ্র মাটি আর ঝোপঝাড়। সেই পরিবেশ আমরা ধ্বংস করছি কংক্রিটের দেয়ালে।


কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,আমরা কি সত্যিই চিরতরে হারাতে চাই জোনাকিদের আলো?

এখনও সময় আছে। রাতে অযথা আলো কমানো, কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস, জলাভূমি ও বনভূমি রক্ষার মত আমাদের ছোট ছোট পদক্ষেপই ফিরিয়ে আনতে পারে সেই হারানো দৃশ্য। তাদের 

বাঁচাতে চালাতে হবে সর্বচ্চ চেষ্টা কারণ, জোনাকি শুধু শৈশবের স্মৃতি নয়, তারা আমাদের পরিবেশের স্বাস্থ্যসূচক। তাদের বিলুপ্তি মানে প্রকৃতির ভারসাম্য ভেঙে পড়া। আজ যদি আমরা কিছু না করি, আগামী প্রজন্ম জোনাকি পোকার কথা শুনবে শুধু গল্পের বইয়ে, দেখবে কেবল ছবিতে।