
সাহিত্যিক অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল হোসেন এতিমখানা। ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
এতিম শিশুদের জন্য সরকারের বরাদ্দ—শুনতে যেন মানবিক উদ্যোগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার একটি এতিমখানা নিয়ে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাগজে-কলমে এখানে এতিমের সংখ্যা যত দেখানো হয়, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম শিশু সেখানে থাকে। অথচ প্রতিবছর কোটি টাকার কাছাকাছি বরাদ্দ এ প্রতিষ্ঠানের নামে গচ্ছিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—এই অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে, আর শিশুদের ভাগ্যে আসলে কী পৌঁছাচ্ছে?
রাজাপুর উপজেলার 'সাহিত্যিক অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল হোসেন' এতিমখানাকে ঘিরে এ অনিয়মের অভিযোগ ছড়িয়েছে সর্বত্র। সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এতিমখানায় ৩৮ জন শিশুর নামে প্রতিবছর প্রায় ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, বরাদ্দ পাওয়া প্রতিটি এতিমের সঙ্গে দ্বিগুণ সাধারণ শিক্ষার্থী থাকার কথা। অর্থাৎ ন্যূনতম ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিয়মিত বসবাস করে মাত্র ৮-১০ জন শিশু।
প্রতিষ্ঠানের বাবুর্চি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দৈনিক সর্বোচ্চ ৫-৭ জনের জন্য রান্না করেন। স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, “সরকার এতিমদের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করে, তার বড় অংশ ভবন নির্মাণ, বাবুর্চি ও হুজুরের বেতনে ব্যয় করা হয়। শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার, পোশাক বা শিক্ষার ব্যয় নামমাত্র।”
অভিভাবকদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, এতিমখানায় পূর্ণাঙ্গ আবাসন ব্যবস্থাই নেই। কাগজে-কলমে দেখানো হয় শিশুদের উপস্থিতি, অথচ বাস্তবে অধিকাংশ সময় ভবন ফাঁকা থাকে। একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েই এতিমখানাটি চালু রাখা হয়েছে। এখানে থেকে পড়াশোনা করছে বলে যাদের নাম দেখানো হয়, তাদের বেশির ভাগ সময় পাওয়া যায় না।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল বলেন, “প্রতিষ্ঠানে এতিমের সংখ্যা কম থাকার বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি। ইতোমধ্যেই একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাকি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “কাগজপত্রে যেমন সংখ্যা দেখানো হয়, বাস্তবে ততজন থাকে না। ছাত্ররা অনেক সময় পালিয়ে বাড়ি চলে যায়, ফলে আসল সংখ্যা কমে যায়।”
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, সরকারি বরাদ্দের টাকা যদি এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না হয়, তবে তা মানবিকতার সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। তারা দাবি করেছেন, প্রকৃত সত্য উদঘাটনে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।