মেয়েটা কী দোষ করেছিল—রক্তাক্ত আয়েশাকে জড়িয়ে বাবার আহাজারি
বাবা সাজ্জাদুন নূর ও মা জুবাইয়া ইসরা'র সাথে হাসিমুখে মেহেরিমা নূর আয়েশা। ছবিঃ সংগৃহীত

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার নিয়ে গ্রামের পথে রওনা দিয়েছিলেন সাজ্জাদুন নূর। সিএনজিতে পাশে বসা স্ত্রী আর কোলে একমাত্র সন্তান—দুই বছরের আয়েশা। কেউ জানতো না, এই সফর রূপ নেবে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্বপ্রান্তে এসে থেমে গেল সব স্বপ্ন। কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন ধাক্কা দিয়ে অটোরিকশাটিকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। সেই ধাক্কায় লুটিয়ে পড়ে ছোট্ট আয়েশার নিথর দেহ। ছিন্নভিন্ন ঈদ—রক্তাক্ত এক সকাল ছুঁয়ে গেল চট্টগ্রামের আকাশ।

ঘটনাস্থলে বেঁচে গেলেন বাবা সাজ্জাদুন ও মা জুবাইয়া। কিন্তু তাঁদের কোল ফাঁকা হয়ে গেল চিরতরে। মেয়ের নিথর দেহ কোলে নিয়ে বাবার কান্না ভেসে বেড়াল চট্টগ্রামের বাতাসে—"আমার মেয়েটা কী দোষ করেছিল? ও তো শুধু পানি খেতে চেয়েছিল, আমি ওর জন্য পানির বোতল কিনেছিলাম... এখন সব শেষ।"

শিশু আয়েশা ছিল সাজ্জাদুন ও ইসরার একমাত্র সন্তান। চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তাঁরা। গ্রামে ঈদের ছুটি কাটাতে যাচ্ছিলেন বোয়ালখালীর পূর্বগোমদণ্ডী ইউনিয়নে। অথচ সেই বাড়িতেই ফিরতে হলো এক খণ্ড কাপড়ে মোড়ানো শিশুর মরদেহ নিয়ে।

দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও দুজন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন, যাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে আসছে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী ট্রেনটিকে সেতুর পূর্ব প্রান্তে থেমে লাইনম্যানের সংকেত পাওয়ার পর সেতুতে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি সংকেত না নিয়েই দ্রুতগতিতে সেতুতে প্রবেশ করে, আর তখনই ঘটে মর্মান্তিক এ ঘটনা।

একটি নষ্ট গাড়ি সেতুর ওপর আটকে ছিল, ফলে সিএনজি ও মোটরসাইকেলগুলো নামতে পারেনি। সেই ফাঁদেই আটকে পড়ে একটি পরিবার—যাদের জীবনে ঈদের চাঁদ ওঠার আগেই নেমে এল দীর্ঘ অমাবস্যা।

প্রশ্ন থেকে যায়—এই মৃত্যু, এই কান্না—এর দায় আসলে কার? বাবা সাজ্জাদুনের বুকচেরা কান্না হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর চেয়ে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে এই ট্র্যাজেডিকে।