বিনিয়োগের লোভে ১০ দিনে কোটি টাকা খোয়ালেন ব্যাংক কর্মকর্তা
ছবিঃ সংগৃহীত

চাকরির নির্ধারিত বেতনের বাইরে আর্থিক সচ্ছলতা বাড়াতে অনেকেই বাড়তি উপার্জনের পথ খোঁজেন। এমনই এক চেষ্টা করেছিলেন পুরান ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা। অনলাইনে আয়ের লোভে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে তিনি ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু সেই অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যায় একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

গত ২১ মে লালবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে “আপওয়ার্ক ফ্রন্টডেস্ক–২০২৩” নামের একটি ভুয়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করেন। প্রথমদিকে কিছু টাকা আয়ের পর তাঁকে “ভিআইপি গ্রুপে” যুক্ত করা হয় এবং পরে কোম্পানির অংশীদার হওয়ার লোভ দেখানো হয়। এই প্রলোভনে পড়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের থেকে ধার, ব্যাংক ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ জোগাড় করে প্রতারকদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠান।

তাঁর ভাষায়, “হোয়াটসঅ্যাপে ‘আপওয়ার্কে’ খণ্ডকালীন চাকরির প্রস্তাব পেয়ে আমি আগ্রহী হই। শুরুতে টেলিগ্রাম গ্রুপে কিছু কাজ পাই এবং প্রতিবারই কিছু টাকা বিকাশে আসে। এতে আমার বিশ্বাস আরও গভীর হয়। একপর্যায়ে আমাকে ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয় এবং অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা দেখা যায়। এরপর বলা হয়, সেই অর্থ তুলতে হলে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। আমি সেটাও করি।”

এরপর এক ব্যক্তি নিজেকে আপওয়ার্কের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন এবং অংশীদার হওয়ার ভুয়া কাগজপত্র পাঠান। পরে ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন যে পুরো প্রতিষ্ঠানটিই ভুয়া এবং প্রতারক চক্রের ফাঁদ। তখন প্রতারকদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং কয়েক দিন ঘরেই ছিলেন। পরে পরিবারের সহায়তায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করেন এবং প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল খান বলেন, “আপওয়ার্ক ফ্রন্টডেস্ক নামের কোনো প্রতিষ্ঠান বাস্তবে নেই। এটি একটি সংগঠিত প্রতারকচক্রের অংশ। আমরা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।”

ভুক্তভোগী আরও বলেন, “আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। পারিবারিক ফ্ল্যাটে আমরা একসঙ্গে থাকি। প্রতারকদের প্রভাবে আমি নিজের স্বাভাবিক বিচারবোধ হারিয়ে ফেলেছিলাম। নানা অজুহাতে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছি, আবার ব্যাংক ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করেছি। আমি চাই প্রতারকরা যেন আইনের আওতায় আসে।”