
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের উপরে গুলিতে এবং আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকরা সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন নিহত, সহস্রাধিক আহত ।
হাজারো মানুষ গ্রেপ্তার হয়, যেখানে হামলা অংশে সরকারি বাহিনী ও রাজনৈতিক কর্মী উভয়ের ভূমিকা ছিল। খ্যাত মানবাধিকার সংস্থা আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মৃত্যুর ঘটনায় অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, টিয়ার গ্যাস, রবার ও লাইভ গুলি চালনার অভিযোগ তুলে ধরেছিল।
এই অশান্ত সময়ের পর, ৮ আগস্ট ২০২৪ সালে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, যা জনসাধারণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং মানবাধিকার পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। সাধারণ আদালতে মোট ১,৬০১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে – যার মধ্যে ৬৩৭টি হত্যা মামলা, কিন্তু অধিকাংশ গ্রেপ্তার স্বতন্ত্র প্রমাণ না দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবং অনেক নির্দোষ ব্যক্তিই দীর্ঘ সময় আটকাবস্থায় রয়েছেন। তদন্ত ও অভিযোগ গঠনের পূর্বেই বনিবনা অনুপস্থিতিতে একজনকেও আটকের ঘটনা নজিরবিহীন, যা ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল পুলিশের নির্দেশনায় ‘যথাযথ প্রমাণসহ’ গ্রেপ্তারের শর্ত যোগ করার মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, তবে সেই নির্দেশনাকে হাইকোর্ট স্থগিত করে এবং সরকারের আপিল বা আইন সংশোধন হয়নি।
এদিকে, ২০২৫ সালের ১০ জুলাই ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে, প্রমাণ অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হলেই অতি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অভিযুক্তের নাম এফআইআর থেকে মুছে দিতে পারবেন— যদিও এটা আসন্ন নির্দোষ ব্যক্তিকে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি জাতীয় বা পরিচিত ব্যক্তির জামিন কার্যক্রমে বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা লক্ষ্যনীয়; জেলা ও ম্যাজিস্ট্রেট মামলা জামিন দিতে অনিচ্ছুক থাকলেও হাইকোর্ট জামিন দেয়, যা অ্যাটর্নি জেনারেলের আপিলে স্থগিত হতে পারে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়েছে। ২৫ জুন ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ৭৩ জন গ্রেপ্তার, তিনটি মামলায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সহ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অন্তর্ভুক্ত। এটি মূলত প্রমাণভিত্তিক হলেও আইনের কাঠামোতে স্পষ্টতার অভাব—যেমন আপিলের সুযোগ, সুপিরিয়র দায় ধারণার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা, ইন অ্যাবসেন্টিয়া ট্রায়ালের পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও মৃত্যুদণ্ড প্রথা—যা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
অবশ্য, জাতিসংঘের ওএইচসিএইচআর’র প্রতিবেদন (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের ব্যবস্থা “একটি সুশৃঙ্খল নীতি অনুসরণ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে”, এবং এই ঘটনাকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এই বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট যে, এক বছরের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া কিছু অগ্রগতি করেছে: আইন সংস্কার, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্ত, এবং ১২টি রিফর্ম কমিশনের গঠন। তবে গ্রেপ্তার, তদন্ত, জামিন, আদেশ বা দায়মুক্তির ক্ষেত্রে সরকার এখনো প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার মোকাবিলা করে চলেছে।
সংক্ষিপ্তভাবে—প্রক্রিয়া নিজে বহু ক্ষেত্রে শক্তভাবে চালু হয়েছে, তবে সামগ্রিক বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় এখনো সমন্বয়, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন একটি সুচারু কাঠামো গড়ে ওঠেনি।