
রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুপুরের ক্লাস শেষে যখন শিক্ষার্থীরা বাইরে বের হচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7 BGI প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি কলেজ ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহত ও প্রায় ২০০ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী।
দুর্ঘটনার সময় ও পরিস্থিতি: প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি আকাশে আচমকা ঘূর্ণায়মান হয়ে নীচে নেমে আসে এবং এক পর্যায়ে কলেজের মূল ভবনের পশ্চিমাংশে সজোরে আঘাত হানে। সংঘর্ষের পরপরই বিকট বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ক্লাস শেষে অনেক শিক্ষার্থী তখনও কলেজ চত্বরে অবস্থান করছিল।
উদ্ধার কার্যক্রম: দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, লুবানা মেডিকেল, ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর দগ্ধদের মধ্যে কয়েকজনকে সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিমান বাহিনীর প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশিক্ষণ চলাকালীন পাইলটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের শেষ যোগাযোগ ছিল দুপুর ১২টা ৫৮ মিনিটে। বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে পাইলট “ইঞ্জিন ফেইলিওর” বার্তা পাঠান। দুর্ঘটনায় পাইলট উইং কমান্ডার মিরাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান: স্থানীয় একজন দোকানদার জানান, “বাচ্চাগুলা ক্লাস থেইকা বাইর হইতেছে, এমন সময় আকাশ থেইকা একটানেই নামল জেটটা। তারপর বিশাল আওয়াজ আর আগুন!”
শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রাণভয়ে দেয়াল টপকে বাইরে পালায়। অনেকে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে দুর্ঘটনার ছবি ও ভিডিও। অভিভাবকেরা হাসপাতালে ছুটে যান সন্তানদের খোঁজে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ও সামরিক প্রশিক্ষণ বিমানের ফ্লাইট পাথ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নাগরিক সমাজ।
উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন কলেজে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমরা নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।