মুগ্ধা মেডিকেল হাসপাতালে লিফট অচল: রোগীদের চরম ভোগান্তি
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি হাসপাতাল— মুগ্ধা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানে রোগীদের ন্যূনতম সুবিধাটুকু নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বর্তমানে এই হাসপাতালের তিনটি লিফটের মধ্যে দুটি লিফট দীর্ঘদিন ধরে অচল, এবং সচল একটি লিফটও প্রায় সময়েই ঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে রোগী ও স্বজনদেরকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।

হাসপাতালের বহুতল ভবনে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভর্তি থাকেন। কেউ সদ্য অস্ত্রোপচার করেছেন, কেউ বা গুরুতর অসুস্থ, আবার কেউ হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন। এমন অবস্থায় লিফট না থাকায় রোগীদেরকে হাত দিয়ে বা স্ট্রেচারে টেনে-হিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে হচ্ছে।

একজন স্বজন বলেন:

“আমার বাবার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু লিফট না থাকায় আমাকে ও দু’জন ওয়ার্ডবয়ের সাহায্যে তৃতীয় তলায় সিঁড়ি বেয়ে উঠাতে হয়েছে। এটা কি কোনও আধুনিক হাসপাতালের চিত্র হতে পারে?”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ বলছেন—"লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে", কেউ আবার বলেন—"ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে।" কিন্তু এই কথাবার্তা রোগীদের দুর্ভোগ দূর করতে পারছে না। রোগীরা জানতে চায়— কতদিন ধরে লিফটগুলো অচল? কেন এখনো মেরামত হয়নি? এর দায় কার?

অনেকে বলছেন, শুধু যন্ত্রপাতি থাকা যথেষ্ট নয়, সেগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ সময় কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে যায়, আর ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ।

লিফট না থাকায় হুইলচেয়ারে থাকা বৃদ্ধ রোগীদের সিঁড়িতে ওঠানামা করাতে গিয়ে আরও শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগী নিয়ে গিয়ে ৫-৬ তলায় ওঠানো যেন এক ‘যুদ্ধের’ সমান কষ্ট।

একজন নার্স বলেন:

“অনেক সময় রোগীকে সিঁড়ি দিয়ে তুলতে গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার টেনে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিবেশে আমরা যেমন বিপদে থাকি, রোগীদের জন্যও এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”

এই দুরবস্থার প্রেক্ষিতে রোগী, স্বজন, এবং সচেতন নাগরিকরা নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরছেন:

1. তিনটি লিফট দ্রুত সচল করা হোক।

2. লিফট ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।

3. লিফট অপারেটরের দায়িত্বে দক্ষ জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক।

4. লিফট অচল থাকলে রোগী পরিবহনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হোক।

মুগ্ধা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে এমন অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা মেনে নেওয়া যায় না। স্বাস্থ্য খাতে সাধারণ মানুষের ওপর থেকে আস্থা উঠে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই ধরণের অবহেলা।

এই পরিস্থিতিতে আমরা সবাই—চিকিৎসা সেবাদানকারী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের একসাথে ভাবতে হবে। কারণ, একটি কার্যকর ও মানবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কেবল চিকিৎসা দিয়েই নয়, রোগীদের সম্মান ও সহানুভূতির পরিবেশ নিশ্চিত করেও গড়ে ওঠে।