"মানুষই প্রকৃতি বিধ্বংসী" : ইউনূস
সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান–২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা–২০২৫ এর উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জীবন বাঁচাতে যেই পরিবেশ দরকার, মানুষ সেই পরিবেশকেই ধ্বংস করে চলেছে। আমরা নিজেরাই এই ধ্বংসযজ্ঞের আসামি।” তিনি আরও বলেন, “প্লাস্টিক এমন এক বস্তু, যার জন্ম আছে কিন্তু মৃত্যু নেই। এটি জীবন ও প্রকৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয় আমরা থাকব, না হয় প্লাস্টিক থাকবে—দুজন একসাথে থাকতে পারবে না।”

তিনি বলেন, দেশের নদী, খাল, বিল, এমনকি মায়ের দুধ ও মাছের শরীরেও এখন মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। “আমরা আত্মাহুতির পথে হাঁটছি। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে,” বলেন তিনি।

ড. ইউনূস সব ধরনের ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সরকারি অফিসগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্লাস্টিকমুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি 'জিরো ওয়েস্ট' লাইফস্টাইলের ধারণা তুলে ধরে বলেন, “সপ্তাহে অন্তত একদিন প্লাস্টিক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত থেকে আমাদের পরিবর্তন শুরু হোক।”

অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সরকার ইতোমধ্যে ১১ হাজার ৪৫৯ একর বনভূমি, ২০টি খাল ও ৪টি নদী দখলমুক্ত করেছে। দেশের সব সুপারশপ এখন পলিথিনমুক্ত।”

ইউনূস বলেন, “আমরা যদি এই যুদ্ধে জয়ী হতে চাই, তাহলে আমাদের জীবনের ধরন পাল্টাতে হবে। প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ না করলে এর ভয়াবহতা রোধ সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করছি। নদী, বন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে যেটা হয়, তা উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন ভাবনার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হবে।”

আলোচনায় তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের শক্তি ও ভূমিকার কথা স্মরণ করেন এবং বলেন, “এই তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যতের নতুন বাংলাদেশ গড়বে।” তিনি তাদের প্রতি আহ্বান জানান জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় দায়িত্বশীল হয়ে এগিয়ে আসার।

অনুষ্ঠানে ৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টা একটি সোনালু গাছ রোপণ করে বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষরোপণ অভিযান–২০২৫ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।