
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন কিছু মুখ আছে, যাদের নাম সামনে আসলেই মনে পড়ে যায় এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য, এক মায়াবী উপস্থিতি। তাঁদের মধ্যে অন্যতম, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। রূপে, গুণে, অভিনয়ে তিনি যেন এক পরিপূর্ণ শিল্পী। সেই রহস্যে ভরা ডাগর ডাগর চোখ, সেই মায়া মাখা হাসি। বাংলা সিনেমার সোনালি যুগে যিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অনন্য অবিনশ্বর নক্ষত্র ।
উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে কাব্য—সবখানেই সাবিত্রী ছিলেন অপূর্ব। কিন্তু রূপের উজ্জ্বল আলো ছাপিয়ে যে অন্ধকার একাকীত্ব, সেটি কেবল তিনিই জানতেন।
অভিনয়ে পেয়েছেন অজস্র ভালোবাসা, কিন্তু ব্যক্তিজীবনে থেকে গেছেন এক অমীমাংসিত গল্পের নায়িকা। কেনো এমন এক রূপবতী নারী, যিনি সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন,পেলেন না নিজের জীবনে সংসারের আশ্রয়?
জানা যায়, মহানায়ক উত্তম কুমার নিজেও দুর্বল ছিলেন সাবিত্রীর প্রতি । তিনি নাকি চাননি, সাবিত্রী অন্য কারও সঙ্গে সংসার পাতুক। তাঁদের প্রেমের গুঞ্জন ছিল তখন সমগ্র টালিগঞ্জ জুড়ে। কিন্তু সেই প্রেম রূপ নেয়নি বিবাহে।
এরপর আসে আরও এক অধ্যায়—অভিনেতা সর্বেন্দ্র সিং। তাঁকে এতটাই ভালোবেসেছিলেন সাবিত্রী যে, মনে মনে ‘স্বামী’ বলে মেনে নিয়েছিলেন। আত্মজীবনী “সত্যি সাবিত্রী” –তে নিজেই লিখেছিলেন, “সিঁথিতে না হয় নাইবা সিঁদুর ছোঁয়ানো হলো, তবু দু’টো মন কি নীরবে বিবাহমন্ত্র উচ্চারণ করেনি?”
কিন্তু বিধিবাম! সর্বেন্দ্রও ছিলেন বিবাহিত। সাবিত্রী কখনোই কারও সংসার ভাঙতে চাননি। তাই নিজের হৃদয়ের টুকরো নিয়ে তিনি নিঃশব্দে সরে গিয়েছিলেন একপাশে।
প্রেম এসেছিল, থেকেও গেছে হারিয়ে। সময় কেটেছে, বয়স বেড়েছে, কিন্তু ভালো চরিত্রের খোঁজ আর কাজের প্রতি ভালোবাসা—তা আজও তাজা তার মনে।
আজ ৮৮ বছর বয়সেও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় রয়ে গেছেন একইরকম উজ্জ্বল, একইরকম দৃঢ়। হয়তো সিঁথিতে সিঁদুর নেই, কিন্তু জীবনের মঞ্চে তিনি পরেছেন এক অমর শিল্পীর মুকুট—যে মুকুটের দীপ্তি কখনো ম্লান হবে না।