
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আফতাবনগর ও বনশ্রী এলাকার মানুষের জন্য যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। রামপুরা খালের (প্রবাহমান নড়াই নদী) ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের স্বপ্ন এক ধাপ এগোল। এই সেতুর নামকরণ করা হয়েছে ‘নগর মৈত্রী সেতু’।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় আফতাবনগরের লেকভিউ রোড এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের নগরায়ণকে মাথায় রেখেই এই সেতুগুলো করা হচ্ছে। মেট্রোরেলের কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে চাপ বাড়বে। সেই চাপ কমিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন জানান, তিনটি সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। সেতুগুলো হবে স্টিল ফ্রেম কাঠামোর। প্রতিটি সেতুর দুই পাশে থাকবে ১৩টি করে পাইল, প্রতিটি পাইল যাবে ৫০ মিটার গভীরে। ইতোমধ্যেই সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি শুধু একটি অবকাঠামো নয়, ভবিষ্যতের শহর বিন্যাসের একটি অংশ। নগরীর যানজট কমানো ও বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই মূল উদ্দেশ্য।
আফতাবনগর ও বনশ্রী সংযোগের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল স্থানীয়দের। বর্তমানে দুই এলাকার মধ্যে চলাচলের জন্য বাসিন্দাদের ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ে। সেতু নির্মাণ শেষ হলে মাত্র কয়েক মিনিটেই দুই এলাকার মানুষ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, “অনেক বছর ধরে আমরা এই সেতুর জন্য অপেক্ষা করেছি। এটা হলে আমাদের যাতায়াতের কষ্ট অনেকটা কমে যাবে।” একইভাবে বনশ্রীর গৃহিণী সুমি আক্তার জানান, “শিশুদের স্কুল, বাজার কিংবা অফিসগামী মানুষের জন্য সেতুটি হবে বড় স্বস্তি। বিশেষ করে জরুরি অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পথ তৈরি হবে।”
নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতা। নতুন এই সেতুগুলো চালু হলে শুধু আফতাবনগর-বনশ্রী নয়, রামপুরা ও মালিবাগ হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত বিকল্প সড়ক তৈরি হবে। এতে রাজধানীর পূর্বাঞ্চল থেকে প্রধান সড়কে চাপ কমবে। তাদের মতে, ‘নগর মৈত্রী সেতু’ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি রাজধানীর নগরায়ণে একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জহুরুল ইসলাম সিটি ও বনশ্রী সোসাইটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ইস্টার্ণ হাউজিং-এর আফতাবনগর প্রকল্পের সদস্যবৃন্দ।