ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ক্ষোভ, মার্কিন ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
ছবিঃ সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক সংঘর্ষকে ঘিরে। ইসরায়েলের চালানো ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেহরান।

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে চালানো এই অভিযানে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তা নিহত হন।

এই ঘটনার পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বক্তব্যে বলেন, “ইসরায়েল নিজেই নিজের জন্য করুণ পরিণতির পথ তৈরি করেছে।” তিনি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জঘন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে আখ্যা দেন।

ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, হামলায় শুধু সামরিক স্থাপনাই নয়, আবাসিক ভবনকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এতে কোম শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জনমনে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে ‘প্রতিশোধ চাই’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন।

এ হামলার পেছনে শুধুমাত্র ইসরায়েলের নয়, অন্য কোনো পরাশক্তির ছায়া রয়েছে কি না—এ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফাজল শেখারচি এক বিবৃতিতে বলেন, “এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে।” যদিও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’-এর প্রতি বারবার জোর দেওয়ার ফলে কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, ওয়াশিংটন এই হামলাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

ঘটনার পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও আসতে শুরু করেছে। মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দুই দেশ সৌদি আরব ও তুরস্ক ইরানে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির সরাসরি লঙ্ঘন।” তুরস্কের মতে, “ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযান একটি ‘সীমিত প্রতিরক্ষা অভিযান’ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের পূর্বাভাস হতে পারে। হামলার ধরন, সময় এবং লক্ষ্যবস্তুর ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটি ছিল সুপরিকল্পিত ও কৌশলগতভাবে সাজানো।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। আইডিএফ প্রধান ইয়াল জামির বলেন, “যারা আমাদের চ্যালেঞ্জ করবে, তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।” তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রতিক্রিয়া হবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন ও আরও ব্যাপক।

সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা একটি সংকটজনক মোড় নিয়েছে। বিশ্ববাসীর চোখ এখন আঞ্চলিক শান্তির দিকে, তবে সেই শান্তি কতটা বাস্তবসম্মত—সেটিই বড় প্রশ্ন।

এ পরিস্থিতিতে ইরানের ভেতরে জনতার কণ্ঠেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দাবি— “এবার শুধু নিন্দা নয়, চাই কার্যকর প্রতিরোধ।"