ইতিহাস তোমায় ছাড়বে না, আমেরিকাঃ শি জিনপিং
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রতিটি রাত এখন মধ্যপ্রাচ্যে যেন এক অগ্নিকুণ্ডের প্রতিচ্ছবি। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা, পাল্টা-পাল্টি হামলার মাঝে এবার সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিল চীন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক্সে এক পোস্টে লেখেন, “আলেকজান্ডারও পারস্যবাসীকে পরাজিত করতে পারেনি।” এই মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালেও যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া আরেক পোস্টে শি লিখেছেন, “হ্যালো আমেরিকা, তোমার দিকে প্রেতাত্মা ছুটে আসছে।” তিনি বলেন, পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস চীনকে যা শিখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তা শিখতেও চায় না। তার ভাষায়, সাম্রাজ্য কখনো শত্রুর হাতে ধ্বংস হয় না—তারা ভেঙে পড়ে নিজেদের যুদ্ধযন্ত্রের অতৃপ্ত ক্ষুধার নিচে।

পোস্টে শি আরও লেখেন, “চীন জানে কীভাবে মহাশক্তিগুলো নিজেদের যুদ্ধের পিপাসায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।” তিনি চীনের বিভিন্ন রাজবংশের পতনের ইতিহাস তুলে ধরেন। কিন রাজবংশ, তাং রাজবংশ ও মঙ্গোল সাম্রাজ্যের পতনের উদাহরণ দিয়ে শি বোঝাতে চান, অতিরিক্ত সামরিক আগ্রাসনই সবশেষে পতনের কারণ হয়।

তাঁর মতে, ৭৫০টি সামরিক ঘাঁটি দিয়ে বিশ্ব ঘিরে ফেলা এবং প্রতি বছর এক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার পথই আসলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসের রাস্তায় পরিণত হবে। প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আপনি কি ইতোমধ্যে আপনার প্যারেডে সেই প্রেতাত্মার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন?”

এই পরিস্থিতিতে নীরবতা ভেঙেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইরানে ইসরায়েলের হামলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়েছে গোষ্ঠীটি। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর মহাসচিব নাইম কাসেম এই বিবৃতিতে বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার হুমকি এ অঞ্চলের সব মানুষের বিরুদ্ধে সরাসরি আগ্রাসন।

নাইম কাসেম আরও বলেন, হিজবুল্লাহ ও ইসলামী প্রতিরোধ কখনো নিরপেক্ষ নয়। ইরানের স্বাধীনতা ও বৈধ অধিকার রক্ষায় তারা প্রয়োজন হলে মাঠে নামবে। এতে যুদ্ধের বিষয়ে হিজবুল্লাহর সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সিরিয়াবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত এবং তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত থমাস ব্যারাক বলেন, হিজবুল্লাহ যদি এই যুদ্ধে জড়ায়, তবে তা হবে “খুবই, খুবই, খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত।” তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকেও এমন বার্তা স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইরান জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১৪তম দফার হামলা চালিয়েছে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে নতুন ধরনের বহু ওয়ারহেডযুক্ত কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র এবং আত্মঘাতী ড্রোন। ইরানি গণমাধ্যম দাবি করছে, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একাধিক স্তর ভেদ করে রাজধানী তেল আবিবের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, ইরান এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে যার একটির মধ্যেই ছিল একাধিক সাব-ক্ষেপণাস্ত্র। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের পর এগুলো ভেঙে গিয়ে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা এটিকে নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি “নতুন ও জটিল হুমকি” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এ হামলার ঠিক আগেই আয়াতুল্লাহ খামেনির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওর শুরুতে দেখা যায় গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার দৃশ্য, তারপর আসে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চিত্র ও ইসরায়েলে তার প্রভাব। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল, “এমন ক্ষেপণাস্ত্র, যা বিশ্বের মর্যাদাবান ও সম্মানিত মানুষদের আনন্দ দিয়েছে।”