
পানি — এটি শুধু অমূল্য নয়, জীবনের অপরিহার্য উপাদান। পানি ছাড়া এক মুহূর্তও টিকে থাকা অসম্ভব। অথচ সেই পানির জন্যই আজ হাহাকার উঠেছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য—প্রতিদিন পানি সংগ্রহে নামতে হচ্ছে এক যুদ্ধের ময়দানে, যেখানে কাবুলের লাখো বাসিন্দা লড়ছেন বাঁচা-মরার সংগ্রামে।
একটি আধুনিক রাজধানী শহর আজ প্রায় পানিশূন্য। শহরের অর্ধেকের বেশি কূপ শুকিয়ে গেছে। ইতিহাসে এই প্রথম কাবুল এমন ভয়াবহ পানি সংকটে পড়েছে। প্রতিদিন মানুষ ছুটছেন পানি সংগ্রহে, আর একটু দেরি হলেই মেলে না প্রয়োজনীয় জল।
গত তিন দশকে কাবুলের জনসংখ্যা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে প্রতিবছর প্রাকৃতিক পুনরায় পূরণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ কিউবিক মিটার বেশি পানি উত্তোলন করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা মার্সি কর্পস জানিয়েছে, কাবুলের ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি এখন বিষাক্ত। অপরিকল্পিত স্যানিটেশন, শিল্পবর্জ্য এবং দূষণের কারণে এসব পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে জীবাণু, যা ডায়রিয়া ও বমির মতো রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
তালেবানের বিধিনিষেধে নারীরা একা বাইরে যেতে পারেন না, ফলে পানি সংগ্রহেও পড়তে হচ্ছে বাধার মুখে। প্রতিদিন বহু নারীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে পানি আনতে হয়। একইসাথে শিশুরাও স্কুল ছেড়ে বালতি হাতে পথে নামছে পানি সংগ্রহে, যা তাদের শিক্ষা ও স্বাভাবিক বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে কাবুলে পানি ও স্যানিটেশন খাতে প্রয়োজন ২৬ কোটি ডলার, অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ৮০ লাখ ডলার তহবিল এসেছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে কাবুলের ভবিষ্যৎ হতে পারে আরও ভয়াবহ ও অনিশ্চিত। এই সংকট শুধু পানি সংকট নয়—এটি এক গভীর মানবিক বিপর্যয়।