রুশ আকাশে বিস্ফোরণ: ইউক্রেনের বার্তা কি কেবল সামরিক?

সম্প্রতি রাশিয়ার বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের চালানো হামলাগুলো নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুঃসাহসী ও কৌশলগতভাবে সফল ছিল। ‘অপারেশন স্পাইডার’স ওয়েব’ নামের এই অভিযানে ইউক্রেন দাবি করছে, রাশিয়ার প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও বিবিসি এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি, তবু প্রচারণার দিক থেকে এটি ছিল এক বড় সাফল্য।

অনেকে এই হামলার তুলনা করছেন ইউক্রেনের পূর্বের উল্লেখযোগ্য অভিযানের সঙ্গে—যেমন কৃষ্ণসাগরে রুশ জাহাজ মস্কভা ডুবিয়ে দেওয়া, কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণ, কিংবা সেভাস্তোপোল বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।

ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (এসবিইউ) বলছে, এই অভিযানের পরিকল্পনা চলে ১৮ মাস ধরে। বিশেষভাবে তৈরি ছোট ড্রোন ট্রাকের মাধ্যমে রাশিয়ায় পাচার করে দূরবর্তী চারটি ঘাঁটিতে পাঠিয়ে হামলা চালানো হয়।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সেরহি কুজান বলেন, “বিশ্বে এমন নিখুঁত ও গোপন অভিযানের নজির নেই। এ ধরনের ১২০টি কৌশলগত বোমারু বিমানের মধ্যে অন্তত ৪০টিতে আঘাত হানা হয়েছে, যা এক বিশাল সাফল্য।”

সঠিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হলেও বিশ্লেষক ওলেকসান্দর কোভালেনকো মনে করেন, যেসব বোমারু বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—টিইউ-৯৫, টিইউ-২২ ও টিইউ-১৬০—তারা আর তৈরি হয় না। ফলে এসব বিমান হারানো বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রাশিয়ার পক্ষে সহজে পুষিয়ে ওঠার মতো নয়।

তিনি বলেন, “আজ রাশিয়ার বিমানবাহিনী শুধু দুটি বিমান হারায়নি, হারিয়েছে তাদের দুর্লভ ও কৌশলগত সক্ষমতার অন্যতম শক্তি।”

তবে এই অভিযান শুধু রাশিয়ার সামরিক ক্ষয়ক্ষতির দিকেই ইঙ্গিত করে না। এটি ছিল একটি বার্তাবাহী অপারেশন—যা কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের উদ্দেশেও পাঠানো হয়েছে।

বিবিসি ইউক্রেনিয়ান সার্ভিসের একজন সাংবাদিক সভিয়াতোস্লাভ খোমেনকো বলেন, কিয়েভের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছিলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছে ইউক্রেন এই যুদ্ধ ইতোমধ্যে হেরে গেছে।”

এমন হতাশার বিপরীতে ইউক্রেনের সামরিক সাফল্য নতুন করে আশা জাগিয়েছে। বিশ্লেষক ইলিয়া পোনোমারেঙ্কো বলেন, “যখন একটি জাতি আক্রমণের মুখে পড়ে, তখন তারা আশা হারাতে চায় না। অথচ পশ্চিমা বিশ্ব এমন বার্তা দিচ্ছে যেন ইউক্রেনের পরাজয় অবধারিত।”

‘বিজনেস ইউক্রেন’ নামক একটি সাময়িকী এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছে, “যুদ্ধের মাঠে সব কার্ড এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আজ জেলেনস্কি প্রমাণ করেছেন, ড্রোন যুদ্ধেও তিনি রাজা।”

ক্রেমলিন ও ইউক্রেনের মধ্যে ইস্তাম্বুলে চলমান শান্তি আলোচনার প্রেক্ষাপটে এই অভিযান পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে যে ইউক্রেন এখনো লড়াইয়ে আছে এবং আত্মসমর্পণের কোনো চিন্তা তাদের নেই।

রাশিয়ার অগ্রগতি ধীরে হলেও ইউক্রেন দেখাচ্ছে, তাদের সম্ভাবনা এখনো আছে। এই অভিযানের মাধ্যমে কিয়েভ মস্কো ও ওয়াশিংটনের উদ্দেশে পরিষ্কার বার্তা পাঠিয়েছে—এই যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।