
একদিকে নতুন সূর্যের আলো, অন্যদিকে বারুদের গন্ধ। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ভোরে তেহরানের আকাশে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস—ঠিক তখনই গাজার আকাশ রঞ্জিত হলো রক্তে।
মাত্র ১২ দিনের উত্তেজনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তেহরানের রাস্তায় ফিরেছে উৎসবের রঙ।
কিন্তু সেই উৎসবের ছায়া পর্যন্ত পৌঁছায়নি গাজা উপত্যকায়। সেখানে এখনো চলছে নির্বিচার গণহত্যা। মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক ও ড্রোন হামলায় একদিনেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৬ ফিলিস্তিনি।
এর মধ্যে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্যের জন্য অপেক্ষা করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে খাদ্যের সন্ধানে সহায়তা কেন্দ্রে যাওয়া ২৭ জন নিরস্ত্র মানুষকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চলমান আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার। এর বেশিরভাগই নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে বিভীষিকাময় বাস্তবতা।
আহমেদ হালাওয়া নামে এক ফিলিস্তিনি জানান—“আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু গুলির ঝড় থামেনি। সহায়তা আসার আগেই আমাদের টার্গেট করা হয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে—সহায়তা কেন্দ্রের কাছে সন্দেহভাজনদের উপস্থিতির জেরে তারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো একে ‘সোজাসাপটা যুদ্ধাপরাধ’ বলেই অভিহিত করছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, “মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে শুধু খাদ্য নেওয়ার চেষ্টা করার জন্য। এটি কোনো সহায়তা নয়—এটি ভয়াবহ মানবিক ব্যর্থতা।”
ট্রাম্পের ত্বরিত কূটনীতিতে যেখানে পরমাণু উত্তেজনা ১২ দিনে থেমে যায়, সেখানে গাজার প্রতিটি শিশু মরছে দিনে দিনে। প্রশ্ন ওঠে—এই নীরবতা কেন? মানবতা কি কেবল পরমাণুর পাশে দাঁড়ায়, না কি কিছু জাতির বেলায় তার চোখ বুজে থাকে?
গাজাবাসী হয়তোবা আজ প্রশ্ন করছে—মানবতা কি শুধুই কাগজে লেখা নীতিকথা? নাকি সে দেখতে পায়, কার মুখে রুটি, আর কার পেটে ক্ষুধা?