
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার নতুন ধাপে কাতারের রাজধানী দোহার আল–উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর সোমবার একাধিক দেশ সতর্কতামূলকভাবে তাদের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফ্লাইট বাতিল ও রুট পরিবর্তনের মুখে পড়ে, যা বিমান সংস্থাগুলোর জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
এর আগে রবিবার, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে এর পাল্টা জবাবে ইরান দোহায় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে বিমান চলাচলে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এর প্রভাব ছড়িয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার রুটগুলোতেও। এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাগামী পূর্বাঞ্চলের সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা এড়িয়ে বিকল্প সংকীর্ণ রুট ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন বিমান সংস্থা।
শেষ পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে আকাশসীমা পুনরায় খুলে দেওয়া শুরু হয়। তবে এই ১২ দিনের সংঘাতে, বিশেষ করে শেষ দুই দিন, বিমান চলাচল খাতে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে।
বাহরাইন ও কুয়েত স্বল্প সময়ের জন্য আকাশসীমা বন্ধ রেখে পুনরায় চালু করেছে। দুবাই বিমানবন্দরের কার্যক্রম আংশিকভাবে থেমে থাকলেও আবার শুরু হয়েছে। তবে বাতিল ও বিলম্বিত ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য।
এই সংঘাতের কারণে দোহা ও দুবাইয়ের মতো ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইরান, ইরাক ও ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন আকাশপথ—যেখানে প্রতিনিয়ত যাত্রীবাহী বিমানে ভরপুর থাকে—তা এখন অনেকটাই ফাঁকা।
দোহা থেকে ইউরোপ ও এশিয়ামুখী বহু বিমান ফিরিয়ে আনা হয়। ব্যবসায়ীরা যাত্রা বাতিল করেন। দোহা বিমানবন্দরে থাই বিমানের এক যাত্রী বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির লাউঞ্জে বসে জানতে পারি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যা খবরমাধ্যমে আসার আগেই শুনে যাই।’
বিমান চলাচল বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিরিয়াম জানায়, সোমবার অন্তত দুই ডজন দোহাগামী ফ্লাইট রুট পরিবর্তন করে; বেশির ভাগই ছিল কাতার এয়ারওয়েজের। একইভাবে কুয়েত এয়ারওয়েজ ও ইতিহাদ এয়ারওয়েজও উড়ান স্থগিত বা রুট বদল করে।
স্পেনের আইবেরিয়া দোহায় ফ্লাইট চালু করতে চাইলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের আকাশসীমা যুদ্ধের কারণে আগেই বন্ধ থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথ এখন এশিয়া–ইউরোপ রুটের গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবে বিবেচিত।
ফ্লাইট নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওসপেরি জানায়, ইরানের সম্ভাব্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় দোহা ও দুবাই এড়িয়ে চলছে বেশিরভাগ বিমান।
ফিনএয়ার ৩০ জুন পর্যন্ত দোহাগামী সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস দুবাই ফ্লাইট আজ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। এয়ার ফ্রান্স, আইবেরিয়া, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, এয়ার আস্তানা এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইনসও ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে।
এমন অস্থির পরিস্থিতিতে যাত্রীবাহী বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে জিপিএস বিভ্রাট বা স্পুফিং-এর ঘটনা বেড়েছে। এসকেএআই নামক প্রতিষ্ঠান জানায়, ২৪ ঘণ্টায় পারস্য উপসাগরে ১৫০টির বেশি বিমানে জিপিএস বিভ্রাট শনাক্ত হয়েছে, যা বিপজ্জনক।
যুদ্ধবিরতির পর কুয়েত, বাহরাইন ও কাতার আকাশসীমা আবার খুলেছে। কাতারের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে ফ্লাইট চলাচল।