
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার পর বিশ্ববাজারে চাপে পড়েছে শেয়ারবাজার, বেড়েছে তেলের দাম ও ডলারের মান। সোমবার এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ারবাজারে সূচকের পতন লক্ষ্য করা গেছে, অন্যদিকে ব্রেন্ট তেল পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দানা বাঁধছে অনিশ্চয়তা—তেহরান কীভাবে জবাব দেবে, তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও সরবরাহচেইনকে আবারও বিপর্যস্ত করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তেলবাজারে সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৭৯.১২ ডলার, যা প্রায় ২.৭% বৃদ্ধি। অপরিশোধিত মার্কিন তেলের দাম বেড়ে হয় ৭৫.৯৮ ডলার, ২.৮% বৃদ্ধিতে। যদিও দিনের শুরুতে দাম আরও বেশি বেড়েছিল, পরে কিছুটা কমে আসে।
ডলারের মানও বেড়েছে: জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ১৪৬.৪৮ ইয়েন এবং ইউরোর বিপরীতে ১.১৪৮১ ডলার। ডলার ইনডেক্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯.০৭৮। তবে সোনা বিনিয়োগে তেমন হুড়োহুড়ি না থাকায় প্রতি আউন্সের দাম সামান্য ০.১% কমে দাঁড়িয়েছে ৩,৩৬৩ ডলার।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইরান যদি কৌশলগতভাবে হরমুজ প্রণালিতে কিছুটা অচলাবস্থা তৈরি করে, তবে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, বিশ্বের প্রায় ২৫% তেল ও ২০% এলএনজি এই পথ দিয়েই পরিবাহিত হয়।
কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষক বিবেক ধর বলেন, “প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ না করেও ইরান চাইলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে। কিন্তু তা হলে তাদের নিজেদের রপ্তানিও থেমে যাবে।”
সোমবার শেয়ারবাজার ছিল চাপের মুখে।
• এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার ০.৫%
• নাসডাক ফিউচার ০.৬%
• এমএসসিআই সূচক (জাপান বাদে) ০.৫%
• নিক্কি সূচক (জাপান) ০.৯%
• ইউরোপ: ইউরোস্টক্স ৫০ ফিউচার ০.৭%, ডিএএক্স ০.৭%, এফটিএসই ০.৫% হ্রাস পায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপ ও জাপানের মতো দেশগুলোর আমদানি নির্ভরতা বেশি হওয়ায় বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তাদের অর্থনীতিকে বেশি প্রভাবিত করছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র এখন তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ হওয়ায় তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির আরেকটি বড় ইঙ্গিত এসেছে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড বাজার থেকে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩৯৭%। অথচ সংকটে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা এই বন্ডে ঝুঁকে পড়েন, কিন্তু এবার তেমনটি দেখা যায়নি।
ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী বৈঠক ৩০ জুলাই। বাজারে এখনো সুদহার কমার ইঙ্গিত নেই, যদিও গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জুলাইতেই হার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলসহ অধিকাংশ নীতিনির্ধারক এখনো সতর্ক অবস্থানে।
এই সপ্তাহে হেগে ন্যাটো নেতাদের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। সদস্য দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক সূচকের দিকেও নজর রয়েছে:
• যুক্তরাষ্ট্রের মূল মূল্যস্ফীতি (খাদ্য ও জ্বালানি বাদে)
• সাপ্তাহিক বেকার ভাতার আবেদন সংখ্যা
• জুন মাসের কারখানা কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদন
বিশ্ব অর্থনীতির ওপর আবারও ভর করেছে অস্থিরতার ছায়া। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা, হরমুজ প্রণালির সম্ভাব্য ঝুঁকি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং ফেডের সুদহার নীতির সম্ভাব্য পরিবর্তন—সব মিলে বিনিয়োগকারীদের জন্য সামনে এক অনিশ্চিত পথ।