
ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসনে বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্য সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতা সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু এই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ, হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ‘নাসির গ্রুপ’-এর কর্মীরা ‘ঝুনু গ্রুপ’-এর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা খোশবুর রহমান খোকনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। এই পোস্টকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে নাসির গ্রুপের বোয়ালমারী ছাত্রদলের সাবেক নেতা বনি আমিনের ওপর হামলা চালায় খোকন গ্রুপের সমর্থকরা। হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনায় আরও জানা যায়, আহত বনি আমিনকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় এ কে এম উজ্জ্বল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতা—যিনি একই গ্রুপের ঘনিষ্ঠ—তিনিও হামলার শিকার হন। এতে পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
হামলার পর রাতে বনি আমিন বাদী হয়ে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত মামলা (মামলা নম্বর ০১) রুজু করে।
এরপর শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঝুনু গ্রুপের নেতাকর্মীরা মামলা ও পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজালাল আলমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। তবে মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালেই পুলিশের অভিযান শুরু হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপজেলার কলেজ রোডে চুয়াল্লিশের মোড় এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন, উপজেলা যুবদলের কর্মী রমজান মোল্লা, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আরব আলী এবং আলফাডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম।
আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজালাল আলম বলেন, “সন্ধ্যার আগে ও পরে সংঘটিত ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আসামিরা এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন। তাই তাদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল মনে করছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ এই সহিংস কোন্দল দলের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সমঝোতার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এই কোন্দল আরও বিস্তৃত হয়ে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।