
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কক্ষে শুক্রবার তৈরি হলো ইতিহাসের এক নাটকীয় মুহূর্ত। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন মঞ্চে উঠলেন, তখন চারদিকের পরিবেশ যেন ভারী হয়ে উঠল। আর সেই ভারী নীরবতা ভেঙে মুহূর্তেই শতাধিক কূটনীতিক উঠে দাঁড়ালেন। ঝড়ের বেগে তারা সভাকক্ষ ত্যাগ করলেন—এ যেন গাজায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে বিশ্বের গর্জে ওঠা প্রতিবাদ।
ভাষণ শুরু করার আগেই রীতিমতো থ’ বোনে যান বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এই লজ্জাজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেতানিয়াহুর সমর্থকেরা মরিয়া হয়ে বাজাতে থাকে করতালি। কিন্তু দৃশ্যটা ছিল স্পষ্ট—সভাকক্ষ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, বেরোনোর পথে শুরু হয়ে গিয়েছে ঠেলাঠেলি। সঞ্চালকদের বার বার অনুরোধেও ফেরানো যায় নি ওয়াক আউটকারী প্রতিনিধিদের। এটি যেন বিশ্ব কূটনীতির মঞ্চে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দেওয়া নীরব অথচ শক্তিশালী প্রতিবাদী রায়।
এসময়, মার্কিন প্রতিনিধি দল হাততালি দিয়ে সমর্থন জানালেও ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ পরে। এক পাশে করতালি, অন্য পাশে প্রতিরোধের প্রতীক—মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু যেন সাক্ষী হলেন বিভক্ত বিশ্বমঞ্চের। তবে এই ঘটনায় যেনো বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করলেন না নেতানিয়াহু। বরং নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় নিয়ে দিলেন নিজের বক্তব্য। হাতে ম্যাপ নিয়েই দিলেন ইরান, হামাস ও হিজবুল্লাহকে যেকোনো মূল্যে ধ্বংসের ঘোষণা। যেনো দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনে চালানো হত্যাযজ্ঞের জন্য নূন্যতম অনুশোচনা নেই তার।
তিনি বলেন, “সামনাসামনি অনেক বিশ্বনেতা আমাদের সমালোচনা করলেও পেছনে তারাই আবার আমাদের ধন্যবাদ জানায়।
এসময় হামাস, হিসবুল্লাহ, আল কায়েদাকে আমেরিকা, ইউরোপ ও ইসরাইলের একই শত্রু দাবি করে তিনি বলেন, “গোপনে তাদের হয়েই লড়াই করে যাচ্ছে ইস্রায়েল।”
এর আগেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছিল, এই ভাষণ বর্জন করতে। তাদের অভিযোগ স্পষ্ট—“যুদ্ধাপরাধী” নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুনে সভা কলঙ্কিত হতে পারে না। এমনকি গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, আইসিসিও ২০২৪ সালের নভেম্বরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় তথাকথিত ‘গণহত্যামূলক অভিযান’ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, আহত বা নিখোঁজ। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যেও প্রকাশ পেয়েছে—মে মাস পর্যন্ত নিহতদের ৮০ শতাংশই ছিলেন নিরীহ সাধারণ মানুষ।
তবে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘের মাত্র ১০টি রাষ্ট্র।ইসরাইল,
যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু,পালাউ, পাপুয়া নিউগিনি, প্যারাগুয়ে ও টোঙ্গা । কিন্তু বিশ্বের বাকিরা যেন এক কণ্ঠে বলে দিলো, যুদ্ধাপরাধ ঢাকার চেষ্টা বৃথা!