
শিশুদের হাড় নরম, পেশি ও লিগামেন্ট দুর্বল এবং মেরুদণ্ডের গ্রোথ প্লেট সংবেদনশীল হওয়ায় প্রতিদিন ভারী স্কুল ব্যাগ বহন করা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারণ হতে পারে। শুধুমাত্র সাময়িক অস্বস্তি নয়, বরং মেরুদণ্ডের সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, ভঙ্গি পরিবর্তন এবং পেশি ও হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভারী ব্যাগ বহনের সম্ভাব্য সমস্যাঃ
পেশি ও হাড়ের সমস্যাঃ লাম্বার স্ট্রেইন, কুঁজো ভঙ্গি, কাঁধ সামনের দিকে চলে আসা, ফরওয়ার্ড হেড পোশ্চার, স্কোলিওসিস এবং কাইফোসিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এক কাঁধে ভার বহনের ফলে মেরুদণ্ডের হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
স্নায়ুবিষয়ক সমস্যাঃ ব্যাগের স্ট্র্যাপে চাপ পড়ার ফলে ব্রাকিয়াল প্লেক্সাসে চাপ পড়ে এবং নার্ভে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য সমস্যাঃ হাঁটার ভঙ্গি পরিবর্তন, স্কুলে মনোযোগ কমা, বৃদ্ধি ও বিকাশে বাধা।
সমস্যার সমাধান ও করণীয়ঃ
ব্যাথা কমাতেঃ হট প্যাক, আলট্রাসাউন্ড, টেনস প্রয়োগ। প্রয়োজনে স্বল্প মেয়াদে ব্যথানাশক ওষুধ। পেশিতে টান লাগলে স্ট্রেচিং।
পোশ্চার ট্রেনিংঃ আয়নায় ভঙ্গি পরীক্ষা ও অনুশীলন। স্কুলে পোশ্চার অ্যাওয়ারনেস ক্লাস। শিশুদের সঠিক ব্যাগ বহনের কৌশল শেখানো।
রিহ্যাবিলিটেশন ও সচেতনতাঃ অভিভাবকরা প্রতিদিন ব্যাগ পরীক্ষা করবেন এবং অপ্রয়োজনীয় বই সরিয়ে দেবেন। শিক্ষকেরা লকার ব্যবস্থা রাখবেন।
শারীরিক ব্যায়ামঃ দৈনন্দিন ৩০-৪৫ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম, দৌড়ানো বা সাঁতার। দীর্ঘ সময় ভার বহন না করে মাঝে মাঝে বিশ্রাম।
ব্যাগ বহনের সঠিক কৌশলঃ ব্যাগের ওজন শিশুর শরীরের ১০-১৫% এর বেশি হবে না, চওড়া, নরম ও অ্যাডজাস্টেবল স্ট্র্যাপ ব্যবহার, ব্যাগ কোমর পর্যন্ত থাকবে, নিতম্বের নিচে ঝুলবে না, ভারী বই পিঠের দিকে রাখতে হবে,সব সময় দুই কাঁধে সমানভাবে ঝুলাতে হবে, প্রতিদিন সব বই বহন না করে ক্লাসভিত্তিক বই বহন।
ভারী ব্যাগ শিশুদের জন্য একটি নীরব স্বাস্থ্যঝুঁকি। সঠিক অভ্যাস, সচেতনতা এবং স্কুলে লকার ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। অভিভাবক, শিক্ষক ও চিকিৎসক একসঙ্গে কাজ করলে শিশুদের মেরুদণ্ড, পেশি এবং ভঙ্গি সুস্থ রাখা সম্ভব।