
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শপথ না নিয়েই মেয়রের ভূমিকা পালন করছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার নগর ভবনের একটি মিলনায়তনে তিনি প্রায় ৭০ জন ওয়ার্ড সচিব এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সভার ব্যানারে তাঁকে "মাননীয় মেয়র" হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যেখানে নাগরিক সেবা নিয়ে মতবিনিময় হয়।
সভায় ইশরাক প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন, যেখানে সাবেক বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রাখার কথা বলেন। এই কমিটির মাধ্যমে নাগরিক সেবা চালানোর কথাও জানান তিনি। ওয়ার্ড সচিবদের নিয়মিত অফিস করতে এবং জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সেবা দিতে বলেন ইশরাক।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে সচিবদের মাধ্যমেই এসব নাগরিক সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থানীয় সরকার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এভাবে শপথ ছাড়াই দায়িত্ব নেওয়া আইনবহির্ভূত এবং নজিরবিহীন। তাঁরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নীরবতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইশরাক সম্প্রতি একাধিক বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক থেকে শুরু করে আজ বুধবার মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এ সময় তিনি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদকের প্রতি আহ্বান জানান। ইশরাক বলেন, উপদেষ্টা অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন এবং শপথ ভঙ্গ করেছেন।
২০১৯ সালের নির্বাচনে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের পর গত ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল ইশরাককে বিজয়ী ঘোষণা করে এবং নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনেরই।
তবে ইশরাকের শপথ এখনো হয়নি। তিনি বলেন, সরকার শপথ বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিল, তবে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। যদি সমাধান না আসে, তবে আন্দোলন রাজপথে ফিরে যাবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
এই অচলাবস্থার মধ্যে নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নগর ভবনের একটি অংশ তালাবদ্ধ, সীমিত আকারে চলছে পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধনের কার্যক্রম।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ জানানো নজিরবিহীন এবং তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে বিএনপিকেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবার আহ্বান জানান তিনি।