চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, দুই উপ-উপাচার্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন আহত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন।
রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, 'আমি তুলনামুলক ভালো আছি কিন্তু আমার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি আহত। এখন পর্যন্ত আমরা আর্মি-বিজিবির থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। প্রতিটি ছাত্রকে তারা দেশীও অস্ত্র দিয়ে আক্রমন করছে। আমরা কোন জগতে আছি? দয়া করে আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন। প্রক্টর, প্রো-ভিসি (একাডেমিক) আহত হয়েছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলিয়ে প্রায় সবাই আহত। মেডিকেলে জায়গা দিতে পারছি না।'
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হেলমেট পরে আমাদের ছাত্রদের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কথা বলেছি, কিন্তু এখনো আমাদের পাশে কেউ নেই।
কাঁদতে কাঁদতে অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা তোমরা শান্ত হও, এলাকাবাসী আপনারা শান্ত হন। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর ধরে আছি, এই গ্রামের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। অন্য একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে। এই গেমে কেউ হাত দিও না।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা শান্ত হও। আমরা তোমাদের পাশে আছি। এ ঘটনার বিচার হবে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার রাতের পর আজ দুপুর ১২টার দিকে ফের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
মূলত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে। ঐ শিক্ষার্থী ২ নম্বর গেটের মাছ বাজার সংলগ্ন শাহাবুদ্দিনের বাসায় ভাড়া থাকেন। তিনি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে মারধর করেন। ওই শিক্ষার্থী তার এক ছেলে বন্ধুকে মুঠো ফনে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ওই দারোয়ানকে ধরতে গেলে ওই এলাকায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়রা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও চবির সোহরাওয়ার্দী হলের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
চবি মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, বহু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা গুরুতর আমরা তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
