চলন্ত বাসে কুবি শিক্ষার্থী 'ধর্ষণ চেষ্টার' অভিযোগ
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে চলন্ত বাসে 'শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার' অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অজামিনযোগ্য দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।


শুক্রবার (২২ আগস্ট) এই ঘটনা ঘটে। সেদিন সকাল ৯টার দিকে কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ‘সেন্টমার্টিন পরিবহণের’ (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৭১৬৬) একটি বাসে ওঠেন ওই শিক্ষার্থী। বাসটি পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে ইউ-টার্ন নেওয়ার কথা থাকলেও তাকে নিয়ে চৌদ্দগ্রামের দিকে চলে যায়। পরে সুয়াগাজী এলাকায় গিয়ে বাসটি পুনরায় পদুয়ার বাজারে ফেরার পথে শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে গলায় ছুরি ধরে গহনা ও টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থী বাধা দিলে অভিযুক্তরা তার হাতে কামড় দেয় ও হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়।


পরে ভুক্তভোগীর অনুরোধে তাকে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে নামিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসে থাকা দুইজনকে আটক করে। এ সময় ঘটনায় জড়িত অপর তিনজন পালিয়ে যায়।


গ্রেফতারকৃত দুইজন হলেন–মোঃ হোসেন আলী (২৫) এবং মোঃ আলী হোসেন (২৩)। গ্রেফতারকৃতদের ভাষ্যমতে পলাতক তিনজন হলেন–পিচ্চি রাসেল (৩২), নূর আলম এবং সৌরভ এবং সেন্টমার্টিন পরিবহনের মালিক হলেন মো: চাঁন মিয়া। 


ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ আসে। শিক্ষার্থীরা বাস মালিক এবং অভিযুক্ত বাকী দুইজনকেক্যাম্পাসে নিয়ে আসার জন্য দাবি জানায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে দুপুর বারোটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি ঠান্ডা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। 


পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় আসলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযুক্তদের দুইবছর কারাদণ্ড দেয়। বাকিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করবে বলে নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সেন্টমার্টিন পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছে। 


এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া খানম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের এসেই আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা শুরুতে আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। অবশেষে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মেনে নিয়েছে।'


কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন  বলেন, 'গ্রেফতার হওয়া দুইজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বাকী অভিযুক্ত অন্য তিনজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। আশাকরি পুলিশ প্রশাসনের কোনো গাফিলতি থাকবে না।'


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, 'আমাদের একজন নারী শিক্ষার্থীদের হাত-পা বেধে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং বাস থেকে ফেলে দিয়ে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দুইজন ধরা পরেছে, তারা পুলিশের কাছে আছে এবং পুলিশ প্রশাসন কথা দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি তিনজনে গ্রেফতার করবে।'


তিনি আরও বলেন, 'এখানে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, তিনি অপরাধীদের ২ বছরের অজামিনযোগ্য জেল দিয়েছেন এবং পুলিশ ঘোষণা দিয়েছেন তারা ১ মাসের মধ্যে চার্জশিট দিবেন যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।'