বিএনপির ত্যাগের ধ্বংসাবশেষ: দলীয় নিয়ন্ত্রণে কেন এখনও ফাঁক?
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

পুরান ঢাকায় ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপির মূল দল, ছাত্র-যুব ও স্বেচ্ছাসেবক সংঘের কিছু নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতা বেড়ে যাওয়ায় দল ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে। যদিও পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে, তবুও বিএনপিকে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্র, জনতা ও স্থানীয় স্তরে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা, খুন, দখল, অর্থ দাবি ও পদসংঘর্ষ নিয়ে আগেই দলটা বিব্রত পরিস্থিতিতে ছিল। এই পর্যায়ে পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী ‘লাল চাঁদ’ নামে পরিচিত সোহাগ হত্যাকাণ্ড যা এক নির্মম ভিডিওর মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে দিয়েছে।

সরকারি নির্বাচন, কাঠামোগত সংস্কার এবং ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে যখন বিরোধ চলছিল, ঠিক সেই সময়ে এই হত্যাকাণ্ড বিএনপির রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঘটনাটি তাই সরকারের সঙ্গে নয়, বরং জনগণের চোখে রাজনৈতিক অঙ্গন লক্ষ্যবিহীন ও বিতর্কিত হওয়ার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি যদিও গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে, দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ঘটনাটিকে ‘শাস্তিমূলক বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাড়িয়ে দেবে’ এমন মন্তব্য করেছেন। কিন্তু একইসঙ্গে তাঁরা নিজেদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণহীনতার কথাও স্বীকার করেছেন।

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানাচ্ছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই জেলা, মহানগর ও থানা পর্যায়ে প্রায় ৭ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়: এত কঠোর পদক্ষেপের পরও কেন দল ওইসব অবৈধ কর্মকাণ্ড রুখতে পারছে না?

অভিযোগ হচ্ছে, কেন্দ্রে থেকে মাঠে অসংখ্য নেতা-কর্মী ঘনিষ্ঠভাবে বলে ভ্রম হচ্ছে, তাদের অনেকেই রাতারাতি অর্থলাভের উদ্দেশ্যে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করছে—চাঁদাবাজি, দখল, আধিপত্য বিস্তার ও স্থানীয় সংঘর্ষ এই কারণেই সংঘটিত হচ্ছে। আর মনোনয়ন সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব এসব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক নেতা (নামের প্রকাশ না) বলছেন, যারা এই ধরনের অপরাধ করছে, তারা দলের প্রধান অঙ্গ না। তবে তাদেরকারণে পুরো দলের ১৬ বছরের লড়াই, সংগ্রাম ও ত্যাগ একবারে ‘ধুলায় মিশে’ যাচ্ছে। এই বিষয়টাই দলের সবচেয়ে বড় দুঃখ।