
বর্ষা এসেছে। নতুন পানিতে ভরে উঠেছে দেশের নদী-নালা, খাল-বিল ও হাওর-বাঁওড়। ফলে গ্রামগঞ্জের মুক্ত জলাশয় থেকে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চান্দা, চিতল, বোয়াল, বাগাড়, গজার, আইড়সহ নানা স্বাদের দেশি মাছ ভেসে উঠছে। এসব মাছ এখন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মিরপুর-৬ ও মিরপুর-২–এর বড়বাগ বাজারে সহজেই দেখা যাচ্ছে।
মিরপুর-৬ নম্বর বাজারের বিক্রেতা হরিদাস রাজবংশীর দোকানে দেখা মিলল টাটকা বড় আকারের পুঁটি, বোয়াল ও ট্যাংরা মাছের। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। ব্যবসায়ী মো. শাহীন এই দোকান থেকে ৪০০ টাকায় আধা কেজি পুঁটি, ৬০০ টাকায় আধা কেজি ট্যাংরা এবং ১ হাজার টাকায় এক কেজি বোয়াল কিনেছেন।
একই বাজারে মো. টিটু নামের একজন চাকরিজীবী ১ হাজার ৩০০ টাকায় এক কেজি বেলে মাছ এবং ২ হাজার ৩০০ টাকায় ৭০০ গ্রাম ইলিশ কেনেন। তাঁর মন্তব্য, দাম অনেক বেশি হলেও বাসার লোকজনের পছন্দের জন্য এসব মাছ কিনতে হচ্ছে।
বড় মাছের ক্ষেত্রেও বাজার জমজমাট। কারওয়ান বাজারে বিক্রেতা বাচ্চু মিয়ার দোকানে পাওয়া গেল ১২ কেজির রুই, যার দাম ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ২০০ টাকা। একই দোকানে ৪ কেজির চিতল, ৬ কেজির আইড় মাছও ছিল, যথাক্রমে ৪ হাজার এবং ৭ হাজার ২০০ টাকা দরে।
মুক্ত জলাশয়ের এসব মাছের দাম ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকার বাজারে দেখা যায়—পুঁটি কেজিপ্রতি ৬০০-১,০০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০-১,২০০, বেলে ৫০০-১,৩০০, গুলশা ৭০০-১,২০০, বোয়াল ৭০০-১,২০০ এবং রুই মাছ ১,৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট মাছ উৎপাদনের ৫৯ শতাংশ চাষের, আর নদী-খাল-বিল ও হাওরের মাছ মাত্র ১৫–১৭ শতাংশ। এই কম সরবরাহ এবং স্বাদে অনন্য হওয়ার কারণে দেশি মাছের দাম বেশি বলে জানানো হয়।
বর্ষা এলেই এসব মাছের প্রাচুর্য দেখা যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক অধ্যাপক আবদুল ওহাব জানান, বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই ডিম ছাড়ে অনেক মাছ, দ্রুত বংশবিস্তার হয় এবং নতুন পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এখন বেশি মাছ ধরা যাচ্ছে।
সরকারও দেশি মাছ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশে ৬৪৯টি অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ। পাশাপাশি ‘বিল নার্সারি’ কার্যক্রমে বর্ষার আগেই রেণুপোনা ছাড়া হয়, পরে তা খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়ে। হাওর অঞ্চলে শত শত বিলের ১০ শতাংশ অংশ ইজারামুক্ত রাখার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে, যাতে সব মাছ একসঙ্গে ধরা না পড়ে।