মন্ত্রী-এমপিদের চাপে নতুন ট্রেন, এখন লোকসানে রেল
ছবিঃ সংগৃহীত

২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ৬৬টি আন্তনগর এবং ৯২টি মেইল, এক্সপ্রেস, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চালু করা হয়। একইসঙ্গে জনপ্রিয় ৯৮টির মতো লোকাল ও মেইল ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন ট্রেন চালুর বড় অংশই হয়েছিল দলের নেতাকর্মীদের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে, যেগুলোর বেশির ভাগই এখন লোকসানে চলছে।

যেমন বিজয় এক্সপ্রেস, যা ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম রুটে চালু হয়েছিল, সেটির রুট ২০২৩ সালে জামালপুর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। রুট পরিবর্তনের আগে কোনো সমীক্ষা না করায় যাত্রীর সংখ্যা কমে যায় এবং এখন ট্রেনটি খরচই তুলতে পারছে না।

এ রকম বহু ট্রেন রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত আবদারে চালু হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন নিজের জেলা পঞ্চগড়কে কেন্দ্র করে বহু আন্তনগর ট্রেনের রুট পরিবর্তন করিয়েছেন এবং একটি স্টেশনের নাম নিজের ভাইয়ের নামে রাখা হয়। সিরাজগঞ্জেও তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের অনুরোধে একটি ট্রেন চালু হলেও, পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় সেটিও আর্থিকভাবে টেকসই হয়নি।

ঢালারচর এক্সপ্রেস চালুর পেছনে প্রায় ১,৭১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রেলপথ তৈরি হয়, অথচ প্রকল্প নেওয়ার সময় কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। একইভাবে, ঢাকা-নোয়াখালী রুটে একসময় উপকূল এক্সপ্রেসে যাত্রীর চাপ ছিল দ্বিগুণ, কিন্তু সড়ক উন্নয়ন ও ট্রেনের সময়সূচি ঠিক না থাকায় বর্তমানে তা যাত্রী হারাচ্ছে। তারপরও সেখানে নতুন সুবর্ণচর এক্সপ্রেস চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যদিও তা পরে বাতিল হয়।

বর্তমানে রেলের অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর। বছরে গড়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনছে রেলওয়ে। ২০০৯-১০ সালে এই লোকসান ছিল ৬৯০ কোটি টাকার মতো। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এমন অবস্থায় নতুন ট্রেন চালু না করে যাত্রী চাহিদার ভিত্তিতে রুট রেশনালাইজেশন করা জরুরি।

বর্তমানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে রুট পর্যালোচনার কাজ চলছে, যাতে কম যাত্রীবাহী বা অলাভজনক ট্রেন বন্ধ করে লাভজনক রুটে ট্রেন বাড়ানো যায়। কিন্তু একবার ট্রেন চালু হয়ে গেলে বন্ধ করতে গেলে স্থানীয়ভাবে বাধা আসে, তাই কাজটি সহজ নয়।

উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে যাত্রী বেশি হলেও রেকের (কোচ সেট) অভাবে ট্রেনগুলো সময়মতো চলতে পারে না। যেমন কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট এক্সপ্রেসে মাসে দুই কোটি টাকার বেশি আয় হলেও বিকল্প রেক না থাকায় প্রায়ই বিলম্ব হয়।

বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ট্রেন চালু করা অপেশাদার কাজ। লাভ-লোকসানের পূর্বাভাস ছাড়া ট্রেন চালু কিংবা স্টেশন স্থাপন হলে সেটি দীর্ঘমেয়াদে অপচয়ের উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।