দুই বীর সেনাকে হারিয়ে স্তব্ধ কুড়িগ্রাম, পরিবারে শোকের মাতম
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

সুদানের আবেই অঞ্চলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে দুই সেনা সদস্যের বাড়ি কুড়িগ্রামে। ​দুই বীর সেনাকে হারিয়ে স্তব্ধ কুড়িগ্রাম, পরিবারে চলছে আহাজারি।


গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে নিহত সেনা সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, 'সুদানের সন্ত্রাসীরা আকস্মিকভাবে ইউএন ঘাঁটিতে হামলা চালায়। হামলার সময় ঘাঁটির ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়। এতে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসময় বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন। আহত হন অন্তত ৮ সদস্য।'


বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়, 'সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে শনিবার স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক ড্রোন হামলা পরিচালনা করা হয়। উক্ত হামলায় দায়িত্বরত ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং ৮ জন শান্তিরক্ষী আহত হন।'


শহীদ শান্তি রক্ষীদের নামও প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনী। শহীন শান্তিরক্ষীরা হলেন, কর্পোরাল মোঃ মাসুদ রানা, এএসসি (নাটোর), সৈনিক মোঃ মমিনুল ইসলাম, বীর (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা, বীর (রাজবাড়ী), সৈনিক শান্ত মন্ডল, বীর (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মোঃ সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনা সদস্য শহীদ শান্ত মন্ডলের (২৬) বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তার বাবা সাবেক সেনা সদস্য (মৃত) নুর ইসলাম মন্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। শান্ত’র বড় ভাই সোহাগ মন্ডল সেনা বাহিনীতে কর্মরত। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ল্যান্স করপোরাল পদে রয়েছেন।


রবিবার দুপুরে শান্ত মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা সাহেরা বেগম শোকে স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে রয়েছেন। কান্নায় লাল হয়ে আছে বড় ভাই সোহাগ মন্ডলের চোখ। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে সহমর্মীতা প্রকাশ করছেন।


শহীদ শান্তর বড় ভাই সোহাগ মন্ডল জানান, শান্ত ২০১৮ সালে সেনা বাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সর্বশেষ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান।


সোহাগ মন্ডল বলেন, ‘গত এক বছর আগে শান্ত বিয়ে করে। তার স্ত্রী বর্তমানে ৫ মাসের অন্তসত্ত্বা। তার বাবার বাড়িতে আছেন। সেও খবর পেয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় শান্ত ভিডিও কলে বাড়ির সবার সাথে কথা বলেছে। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে খবর পাই ওদের ক্যাম্পে হামলা হয়েছে। হামলায় শান্ত মারা গেছে। আমরা এখন তার লাশের অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে বাবার কবরের পাশে তাকে কবর দিতে চাই।’


সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত আরেক শান্তিরক্ষী মমিনুল ইসলামের (৩৮) বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামে। ওই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। বাড়িতে বাবা-মা ও ভাই ছাড়াও স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিত পড়ে। ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর। মাত্র ৩৩ দিন আগে মমিনুল সুদানে গিয়েছিলেন। শনিবার বিকালে ভিডিও কলে বাড়ির সকলের সাথে শেষবারের মতো কথা হয় তার। এরপর রাত ১১ দিকে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার।


মমিনুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুর খবরে বাড়িতে শোকের মাতম। প্রতিবেশিরা বাড়িতে ভিড় করছেন। স্বামীর মৃত্যু শোকে স্ত্রী ও মা মূর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশি ও স্বজনরা তাদের শান্তানা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।


মমিনুলের বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক ভালো মানুষ। এলাকার সবাই তাকে ভালোবাসে। আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন বলেই হয়তো তার শহীদি মৃত্যু হয়েছে। এখন আমরা তার লাশের অপেক্ষায় আছি।'