
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সাম্প্রতিক অনুপস্থিতি নিয়ে দেশের জনগণের মাঝে নানা উদ্বেগ ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সাংবাদিক ফারনাজ ফসিহি বিশ্লেষণ করেছেন। ফারনাজ জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিবেদক হলেও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করছেন।
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক সরাসরি খামেনির অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন তোলেন। জনগণের উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি জানতে চান খামেনি কেমন আছেন। তবে খামেনির দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁরা একই উদ্বেগের খবর পাচ্ছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনী খামেনিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট।
গত এক সপ্তাহ ধরে খামেনি প্রকাশ্যে আসেননি, কোনো ভাষণ বা বার্তাও দেননি, এমনকি এমন সময়েও না যখন দেশ গভীর সংকটে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং পরে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে পাল্টা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, তখনো তিনি নিঃশব্দ। এরপর ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, অথচ এই পুরো সময়ে খামেনি দৃশ্যমান ছিলেন না।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, খামেনি বর্তমানে একটি নিরাপদ বাংকারে অবস্থান করছেন এবং সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবহার করছেন না। এই নীরবতা রাজনৈতিক মহলেও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। খামেনির একান্ত সমর্থক মোহসেন খালিফেহ জানিয়েছেন, তাঁর এই অনুপস্থিতি তাঁদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনি ইরানের সব বড় সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে থাকেন। তবে সাম্প্রতিক বড় সিদ্ধান্তগুলোতে তাঁর ভূমিকা কতটা ছিল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। খামেনির নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামজা সাফাভি বলেন, নিরাপত্তার কারণেই খামেনির বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত রাখা হয়েছে এবং বর্তমান সংকট মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের মতো নেতাদের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খামেনির অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা জোট গঠন করছেন এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। একটি সংযত ও কূটনৈতিক গোষ্ঠী, যাদের নেতৃত্বে আছেন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান, ইরানের পরিচালনায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন।
পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, এই যুদ্ধ এবং জনগণের ঐক্য সরকারের চিন্তায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সুযোগ তৈরি করেছে। অন্যদিকে কট্টরপন্থী গোষ্ঠী, যার নেতৃত্বে আছেন সাঈদ জলিলি, যুদ্ধবিরতি ও আলোচনা ইঙ্গিতকে ‘বিস্ময়কর’ এবং নেতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন। এই বিরোধ দলীয় রাজনীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
এদিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থাপনাগুলোর পুনর্গঠন ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চলবে। চ্যাথাম হাউসের বিশেষজ্ঞ সানাম ভাকিল মনে করেন, খামেনির অনুপস্থিতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দেশটি এখন অত্যন্ত সতর্ক এবং নিরাপত্তাকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, যদি আশুরার আগেও খামেনিকে প্রকাশ্যে দেখা না যায়, তবে এটি উদ্বেগজনক সংকেত হতে পারে।