ইরানের পারমাণবিক ক্ষতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ছবিঃ সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ জানিয়েছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীর চালানো হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর মতে, এই আক্রমণ ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে অন্তত কয়েক বছর পেছনে ঠেলে দিয়েছে।

এই মন্তব্যের পেছনে প্রেক্ষাপট হচ্ছে, সম্প্রতি একটি গোপন মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়ন ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে দাবি করা হয়, মার্কিন হামলার পরেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আংশিকভাবে অক্ষত রয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বিষয়টিকে “ভুয়া সংবাদ” আখ্যা দিয়ে মিডিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন ‘বিকৃত ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের’ জন্য।

সিআইএ প্রধান জন র‍্যাটক্লিফ ট্রাম্পের অবস্থানকে সমর্থন করে জানান, ইরানের বেশ কিছু পরমাণু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যদিও পুরো কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, হামলায় ‘নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে এসব স্থাপনা। পাশাপাশি তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈমানিকদের ‘মর্যাদা রক্ষার লড়াই’ নিয়েও আলোচনা হবে।

এই পরিস্থিতি সামনে এসেছে যখন ইরান ও ইসরায়েল টানা ১২ দিনের সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছিল বলে দাবি ট্রাম্পের। ন্যাটোর সম্মেলনে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে তিনি ইরানে চালানো হামলাকে “ধ্বংসাত্মক ও তীব্র” বলে উল্লেখ করেন।

আগামী সপ্তাহে ইরান–যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আলোচনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি, যেখানে ইরানকে তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে বলা হতে পারে। যদিও এ নিয়ে ইরানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি।

গত শনিবার ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান এলাকার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন বাহিনী হামলা চালায়। ১২৫টি বিমান এই অভিযানে অংশ নেয়। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফর্দো ও ইসফাহানে প্রবেশপথে বিস্ফোরণের চিহ্ন রয়েছে, তবে ভেতরের ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রগুলো ধ্বংস হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের কর্মসূচি হয়তো ‘কয়েক মাস’ পিছিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, ওই মূল্যায়নটি ‘নিম্ন আত্মবিশ্বাস’-সম্পন্ন ছিল।

এদিকে, আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, হামলার কারণে তেহরান হয়তো তাদের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাইও স্বীকার করেছেন যে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যদিও বিস্তারিত কিছু জানাননি।