বিশ্বাস, ভালোবাসা আর আত্মার শান্তির খোঁজে মানুষ কখনো কখনো এমন পথ বেছে নেয়, যা সমাজকে অবাক করে দেয়। সময়ের পরিবর্তনে মানুষ নিজের বিশ্বাস চিন্তার জীবন দর্শন বদলে ফেলে। কেউ খুঁজে আত্মার শান্তি কেউবা খোঁজে আলোর পথ। তেমনি এক অনন্য গল্প যা কল্পনাকে হার মানায়। যেখানে পুরো একটি পরিবার সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।
সনাতন থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ। বিশ্বাসের পথে নতুন জীবন শুরু করলেও থমকে আছে কেন্টু মনিরিশি ওরফে বর্তমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর দুই সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়ানোর স্বপ্ন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার মালি রুট ঋষিপাড়া পাড়ার ছেলে কেন্টু মনিরিশি এখন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আর তার স্ত্রী ফুলমণি এখন মোসাম্মদ ফাতেমা আক্তার। দুজনই একসময় ছিলেন সনাতন ধর্মলম্বী। বিবাহিত জীবনে তিন বছরের মাথায় ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন কেন্টু মনিরিশি। বন্ধুদের পরামর্শে প্রথমে দ্বিধায় থাকলেও ধীরে ধীরে সে ইসলাম সম্পর্কে জানতে শুরু করে। পরবর্তীতে স্থানীয় আলেমদের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কেন্টু মনিরিশি থেকে হয়ে উথেন আব্দুল্লাহ ।
আব্দুল্লাহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের তিন মাস পর ইসলাম সম্পর্কে স্ত্রী কে জানান। প্রথমে অবাক হলেও তিন মাস পরে স্বামীর ধর্ম কর্ম দেখে তিনিও উদ্বুদ্ধ হন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত তাদের জীবনে নিয়ে আসে কঠিন পরিস্থিতি। ছিন্ন হয় পারিবারিক সকল সম্পর্ক। তবুও তারা অটল আছে ইসলাম ধর্মের প্রতি। তারা নিয়মিত নামাজ ইসলামের রীতি-নীতি চর্চা এবং সন্তানদের ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান।
বর্তমানে তারা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারে বিল্লাল ডাক্তারের বাড়াবাড়িতে ছোট্ট একটি ঘরে চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সংসার চালাতে আব্দুল্লাহ কাজ করেন স্থানীয় একটি সেলুনে। যেখানে হেয়ার কাটিং এর আয় দিয়ে চলছে তার পরিবার। বর্তমানে আব্দুল্লাহর সবচেয়ে বড় ইচ্ছে তাঁর দুই সন্তান বেলাল ও রায়হান যেন মাদ্রাসায় পড়তে পারে। কিন্তু অর্থের অভাবে সে পথ এখন বন্ধ। অভাব বাঞ্ছনা আর সমাজের অসহযোগিতা নিয়ে বেঁচে আছে তারা।
নিজের জীবন ধর্মের আলোয় আলোকিত করলেও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আব্দুল্লাহর হৃদয়ে গভীর কষ্ট। তবু তিনি আশা ছাড়েননি। আবেগভরা কণ্ঠে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন “আল্লাহ্র রহমতে একদিন হয়তো কেউ সাহায্যের হাত বাড়াবেন, আমার ছেলেরা ইসলামি শিক্ষা পাবে এই আশাতেই বেঁচে আছি,” । এই অবস্থায় তার ছেলেদের মাদ্রাসায় পড়াতে সে মুসলিম ধর্মের ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের সাহায্য চান এবং সেই সাথে দোয়া চান যেন পরিবার নিয়ে ইসলামের পথে অটুট থাকতে পারে সে।
ধর্মের পরিবর্তন নয়, এটি এক বিশ্বাসের যাত্রা—যেখানে আছে ত্যাগ , আছে দৃঢ়তার গল্প। সেই গল্পই আজ গাজীপুরের এই পরিবারকে করে তুলেছে মানবিক এক অনুপ্রেরণা।

