
খাগড়াছড়ি এখন অস্থিরতায় দগ্ধ। মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে শুরু হওয়া উত্তেজনা এখন রূপ নিয়েছে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র সংঘর্ষে তিনজন নিহত, আহত হয়েছেন এক মেজরসহ ১৩ সেনা, তিন পুলিশ সদস্যসহ আরও অন্তত ৩০ জন। জেলাজুড়ে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
ঘটনার সূত্রপাত ২৩ সেপ্টেম্বর। ১৯ বছর বয়সী শয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকলেও উত্তেজনা থামেনি। সেনাবাহিনী মনে করছে, পার্বত্য এলাকায় নারী ও শিশু ব্যবহার করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
অবরোধ শুরু হয় ২৭ সেপ্টেম্বর। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ টায়ার জ্বালিয়ে, গাছ ফেলে রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবাদ জানায়। রামসু বাজারে ইট-পাটকেল হামলায় তিন সেনা আহত হন। পরের দিন সকালে ইউপিডিএফ সদস্যরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে গুলিবর্ষণ চালায়, সাধারণ মানুষও আহত হন।
নিহতদের বয়স ২০–২৫ বছরের মধ্যে, মরদেহে গুলির চিহ্ন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
জুম্ম ছাত্র-জনতা’র দাবিসমূহ:
অবরোধ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর হামলা ও লুটপাট বন্ধ করতে আইনগত নিশ্চয়তা।
ধর্ষণ মামলার অবশিষ্ট আসামির দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ভুক্তভোগীকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন।
২৭–২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হামলার স্বচ্ছ ও স্বতন্ত্র তদন্ত, রিপোর্ট ৩০ দিনের মধ্যে প্রকাশ।
ক্ষতিগ্রস্ত ও আহতদের পূর্ণ ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা।
আটক সদস্যদের নিঃশর্ত মুক্তি।
জেলাজুড়ে জারি ১৪৪ ধারা বাতিল।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় দুই হাজারের বেশি পর্যটককে নিরাপদে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মনে করছেন, তৃতীয় কোনো পক্ষ অর্থায়নের মাধ্যমে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। পরিস্থিতি অস্থির হলেও প্রশাসন সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।