রাবিতে চলছে কমপ্লিট শাটডাউন; প্রতিবাদে শিবিরের মানববন্ধন
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রশিবির।


বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগঠনের নেতারা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে রাকসু নির্বাচন বানচাল করার জন্য এ বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এ কারণে তিন দফা ভোটের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। ১৬ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।


নেতারা আরও অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাস খোলা থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না, শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না। যেসব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদানের দায়িত্বে রয়েছেন তারা দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি, তাই শিক্ষক-কর্মকর্তারা অযৌক্তিক দাবি থেকে সরে না এলে শিক্ষার্থীরা তাদের বয়কট করবে।


কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার না করলে ক্যাম্পাসে আবার জুলাই নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল। তিনি বলেন, “আজকের এই অচল অবস্থা পরিকল্পিত। একটি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন পিছিয়েছে। আবার শাটডাউনের মাধ্যমে রাকসুকে বানচাল করার চেষ্টা চলছে। 


তিনি প্রশাসনের ভর্তিনীতিকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের আগে এ ইস্যুকে কেন সামনে আনা হচ্ছে। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রায় দেওয়ার পর আন্দোলন হতে পারে, তবে এখনকার শাটডাউন অযৌক্তিক।


শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, পোষ্য কোটা শিক্ষার্থীদের জন্য একপ্রকার জুলুম। একটি গোষ্ঠী এ ইস্যু সামনে এনে তিনটি লক্ষ্য পূরণ করতে চায়—পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনা, পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করা এবং রাকসু নির্বাচন বানচাল করা। তিনি ঘোষণা দেন, ছাত্রশিবির কোনোভাবেই পোষ্য কোটাকে ফিরিয়ে আনতে দেবে না, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে এবং যেভাবেই হোক রাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করবে।


মানববন্ধনে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও একাত্মতা প্রকাশ করেন। এতে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।


এদিকে, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার’ বিচার নিশ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার (পোষ্য কোটা) দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এতে পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।


আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অবস্থান নেন তাঁরা। গতকাল প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেও সমাধান না হওয়ায় তাঁরা এই কর্মবিরতি পালন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন।


এ সময় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থী দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব উপ-উপাচার্যকে লাঞ্ছনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও নামধারী কিছু ছাত্র আমাদের সহকর্মীদের আটকে রেখেছিল। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’


অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা আমাদের দাবির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। আমরা আজ আবার বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলব। আজ আমাদের শাটডাউন বহাল আছে। পরবর্তী কর্মসূচি সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’


প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে ফিরিয়ে দেয়া হয় পোষ্য কোটা। এ ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন বসে পড়েন আমরণ অনশনে। এ সময় অসুস্থ হয়ে চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে গত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে ক্যাম্পাসে। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।