
বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের ঝড় যখন ফ্যাসিবাদী শাসনের দেয়াল ভেঙে দিয়েছিল, তার প্রতিধ্বনি যেন এখন ভেসে আসছে হিমালয়ের দেশ নেপাল থেকে। রাজধানী কাঠমান্ডুর রাজপথ আজ উত্তাল, তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত অন্তত ১৪ জন, রাজধানীতে জারি করা হয়েছে কারফিউ। প্রশ্ন উঠছে, নেপালে কি শুরু হলো আরেকটি ‘জুলাই আন্দোলন’?
বিক্ষোভের সূত্রপাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি নেপাল সরকার নিবন্ধনহীন ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধের ঘোষণা দিলে তরুণরা এটিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখে। ক্ষোভ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে, “নেপো কিড” ও “নেপো বেবিস” হ্যাশট্যাগ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে তরুণ সমাজে। সেই ভার্চুয়াল আন্দোলন অচিরেই নেমে আসে রাজপথে।
সোমবার সকালে হাজার হাজার তরুণ কাঠমান্ডুর মৈতিঘরে সমবেত হয়ে সরকারের পতনের স্লোগান দেন। একপর্যায়ে গেট ভেঙে ঢুকে পড়েন সংসদ ভবনে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান, এমনকি গুলি চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। রক্তে ভিজে যায় কাঠমান্ডুর রাজপথ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদ নয়; বরং দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর গণতান্ত্রিক শূন্যতার বিরুদ্ধে প্রজন্মের বিদ্রোহ। বাংলাদেশের জুলাই গণআন্দোলনের মতো নেপালেও জনতার দাবি, "স্বাধীন মতপ্রকাশ, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং একটি স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।"
আজ কাঠমান্ডুর প্রধান সড়কগুলো কার্যত অচল। সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি, কোনো কিছুই থামাতে পারছে না তরুণদের। এখন প্রশ্ন,নেপালের এই আন্দোলন কি সত্যিই আরেকটি ‘জুলাই বিপ্লব’-এর সূচনা? নাকি দমননীতির কাছে থেমে যাবে এ ক্ষোভ?
তবে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের বিপ্লবী বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে নেপালেও। আর যদি ছাত্র-জনতার লাশের মিছিল দীর্ঘ হয়, তবে কেপি শর্মা অলির পরিণতিও শেখ হাসিনার মতো হওয়া অসম্ভব কিছুই নয়।
নেপাল এখন ধাবমান এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ।