সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাঃ ফুঁসে উঠলো সংবাদকর্মীরা
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে সাংবাদিক সমাজ এক কণ্ঠে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। শাহমখদুম থানায় ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা প্রত্যাহার ও সংশ্লিষ্ট ওসিকে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধনে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব ছাড়াও রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী প্রেসক্লাব, অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ও ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার ও ওসিকে অপসারণের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

জানা যায়, গত ২৬শে আগস্ট রাজশাহী নগরীর অগ্রণী ব্যাংক আরডিএ শাখায় জমি নিলামকে কেন্দ্র করে তথ্যানুসন্ধান করতে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয়দানকারী প্রতারক আক্তারুল ইসলামের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় তিনি একজন সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে ভাঙচুর ও অশালীন আচরণ করেন। ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

পরে সাংবাদিকরা প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারী মামলা না নিয়ে কেবল লিখিত অভিযোগ নেন। উল্টো ২রা সেপ্টেম্বর প্রতারক আক্তারের দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা (নম্বর-২/২০২৫) থানায় রেকর্ড করেন। এতে ছয় সাংবাদিক ও এক ঠিকাদারকে আসামি করা হয়।

মামলায় আসামি হওয়া সাংবাদিকরা হলেন—‘রাজশাহীর আলো’র সম্পাদক আজিবার রহমান, ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ, আরটিভির ক্যামেরাপার্সন আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন, গণমুক্তি পত্রিকার মাজহারুল ইসলাম এবং ‘আজকের প্রত্যাশা’র সাংবাদিক নাজমুল হক।

আক্তারের দাবি—সাংবাদিকরা তার কাছে ৩০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। তবে ভিডিওচিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সাংবাদিক নেতাদের অভিযোগ, এটি সম্পূর্ণ প্রতিশোধমূলক ও পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার। অথচ পুলিশ সাংবাদিকদের সুরক্ষা না দিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীদের আসামি করেছে। এটি শুধু সাংবাদিকদের নয়, গণতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলছে।”

বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ আরিফ, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, অনলাইন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি মীর তোফায়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন জাহিদ, সাংবাদিক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান রকি, আবু কাউসার মাখনসহ অনেকে।

তারা একমত হয়ে বলেন, “এই মিথ্যা মামলা গণমাধ্যমকর্মী সুরক্ষা আইন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছে। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার ও ওসিকে অপসারণ না হলে সাংবাদিক সমাজ দুর্বার আন্দোলনে নামবে।”