
ঢাকার ধানমন্ডির একটি স্কুলের ছাত্রী আফরিন, ফলাফল জানার পর বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। আনন্দের কান্না! তাঁর জীবনের প্রথম বড় সাফল্য। তাঁর মা বললেন, “আমার মেয়ে গ্রামের স্কুল থেকে উঠে এসে আজ ঢাকায় নিজেকে প্রমাণ করেছে। এই মুহূর্তটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গর্বের।”
কেবল শহরেই নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মেয়েরা দেখিয়েছে তাদের দীপ্তি। রাজশাহীর বাঘা, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, কিংবা খুলনার পাইকগাছা—এসব জায়গার অজপাড়াগাঁয়ের মেয়েরাও আজ আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। গায়ে সাদাকালো ইউনিফর্ম, মাথায় বেনি, মুখভরা হাসি—এটাই ২০২৪ সালের SSC জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেয়েদের সেরা ছবি। অনেকেই নিজের স্বপ্নপূরণের পথে প্রথম ধাপ হিসেবে এই সাফল্যকে দেখছে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা যায় মেয়েদের মাঝে নিজস্ব ঢঙে উদযাপন—কেউ বন্ধুদের নিয়ে কেক কাটছে, কেউ ফুলের মালা পরে ছবি তুলছে, কেউবা আবার প্ল্যাকার্ড হাতে বলছে, “আমি পারি!” অনেকে আবার সামাজিক মাধ্যমে জিপিএ-৫ পাওয়ার গল্প শেয়ার করছে—কখনো সংগ্রামের, কখনো অনুপ্রেরণার, আবার কখনো নিঃশব্দ চোখেমুখে রচিত ইতিহাসের।
অনেক মেয়ের জন্য এই সাফল্য কেবল একটি পরীক্ষার ফল নয়—এটি এক নতুন ভবিষ্যতের দরজা। অনেকের পরিবারে প্রথম জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী হয়েও তারা দেখিয়ে দিয়েছে, মেয়েরা যদি সুযোগ পায়, তাহলে তারা আকাশ ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
শিক্ষাবোর্ডের তথ্য বলছে, এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়েরা সংখ্যায় এগিয়ে—৭৩ হাজার ৬১৬ জন। এটাই বলে দেয়, বাংলাদেশের মেয়েরা আর থেমে নেই। তারা এগোচ্ছে, তারা জয় করছে, আর তারা উদযাপন করছে সেই জয়কে বুক ভরে।
আজকের এই উদযাপন শুধু জিপিএ-৫ পাওয়ার নয়, এটা আত্মবিশ্বাস, সাহস আর স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলার প্রতীক। এই মেয়েরা একদিন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, গবেষক বা হয়তো একজন রাষ্ট্রনায়ক হবে। আজ তারা স্কুলের ছাত্রী, কাল তারা দেশের ভবিষ্যৎ।
এসএসসি ২০২৪-এ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সকল মেয়েকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও উষ্ণ অভিনন্দন। জয় হোক শিক্ষার, জয় হোক মেয়েদের অদম্য পথচলার।